—প্রতীকী চিত্র।
একই দিনে দুই সূচক পার করল নতুন মাইলফলক। গত বৃহস্পতিবার ৫৬৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স নজিরবিহীন ভাবে প্রথমবার ঢুকে পড়ে ৭৯ হাজারের ঘরে এবং পরের দিন সেখানেই থেকে যায়। গোটা সপ্তাহে ১৮২৩ এগিয়ে থিতু হয় ৭৯,০৩৩ অঙ্কে। ওই বৃহস্পতিবারই নিফ্টি ১৭৫ উঠে পেরিয়ে গিয়েছিল ২৪ হাজার। শুক্রবার কিছুটা নেমে থামে ২৪,০১১ অঙ্কে। গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিন সেনসেক্স প্রায় ৪৪০০ পয়েন্ট গোত্তা খেয়েছিল। তার পর থেকে শুরু হওয়া সূচকটির স্বপ্নের দৌড় যেন আর থামছেই না।
গত সপ্তাহে লোকসভার স্পিকার নির্বাচনকে ঘিরে সরকার এবং বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই পর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটে যাওয়ায় কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র জোট সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে লগ্নিকারীদের সংশয় অনেকটাই কমেছে। যার প্রতিফলন দেখা যায় দুই সূচকের লাগাতার চার দিন যাবৎ উত্থানে। অনেক শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক উচ্চতায় উঠলেও, বাজারে এখনও পর্যন্ত দুর্বলতার তেমন কোনও লক্ষণ নেই। বৃহস্পতিবার বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে ৭৬৫৯ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল। শুক্রবার একাংশকে বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। তবে তার অঙ্ক মাত্র ২৩ কোটি টাকা। সে দিন ভারতীয় লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ারে ৬৬৫৮ কোটি টাকা ঢালে। অর্থাৎ বাজারে কখনও নগদের অভাব পড়ছে না। সেনসেক্স-নিফ্টির উত্থানে যা জ্বালানি জোগাচ্ছে। এখন দেখার এ সপ্তাহে তারা কত দূর এগোয়।
ভাল খবর আছে বন্ড বা ঋণপত্রের বাজার থেকেও। আর্থিক সংস্থা জেপি মর্গ্যানের উঠতি বাজারের সরকারি বন্ড সূচকে গত শুক্রবার পা রেখেছে ভারত সরকারের বন্ড। এই স্বীকৃতির কারণে ভারতীয় বন্ড বাজারে ২২০০ কোটি ডলার লগ্নি আসতে পারে বলে অনুমান। প্রথম দিকে ওই সূচকে এ দেশের ঋণপত্রের গুরুত্ব হবে ১%। কালক্রমে বেড়ে পৌঁছবে ১০ শতাংশে। এর ফলে ভারতীয় বন্ড বাজারের আকর্ষণ বাড়বে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে। শুক্রবার দিনের শেষে ১০ বছর মেয়াদি ভারত সরকারের বন্ড ইল্ড (বন্ডের প্রকৃত আয়) হয় ৭%।
শেয়ার এবং বন্ড— দুই বাজারই চাঙ্গা থাকায় বেশ স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে। এই পরিবেশে অনেক নতুন ফান্ড বাজারে আসছে। হু হু করে ঢুকছে লগ্নি। শেয়ার এবং বন্ড ছাড়াও জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের লগ্নি-পণ্য। যেমন— সোনা, রুপো ইত্যাদির ইটিএফ প্রকল্প। জনপ্রিয় হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লগ্নি সম্বলিত মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডও।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে এ বারও সুদ বাড়ায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অত্যন্ত চড়ে থাকায় ক্ষীণ আশা ছিল, কোনও কোনও প্রকল্পে সুদ বাড়ানো হতে পারে। দামের চাপে কার্যত নাভিশ্বাস ওঠা সুদ নির্ভর মানুষদের একটু সুরাহা দিতে বিশেষ করে মাসিক আয় প্রকল্পটিতে তা অল্প হলেও বাড়ানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। শেষমেশ তা হয়নি। ফলে হতাশ সাধারণ রোজগেরে এবং প্রবীণ নাগরিক-সহ সুদ নির্ভর মানুষেরা। সব স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ অপরিবর্তিত থাকবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
চড়া মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে আর এক দফা খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে মোবাইল ফোনে টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলি ১০% থেকে ২৭% পর্যন্ত মাসুল বাড়ানোর কথা ঘোষণা করায়। বেশির ভাগ পরিবারেই এখন ২ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। মাসুল এক লাফে এতখানি বাড়ায় পরিবার পিছু মোবাইলের খরচ বিপুল বেড়ে গেল। বহু সাধারণ রোজগেরে গৃহস্থের উপর চাপ বাড়বে। যদিও এই পদক্ষেপ করার ফলে বর্তমানে বাজারে থাকা তিনটি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার (জিয়ো, এয়ারটেল, ভি) শেয়ার চাঙ্গা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তাদের গ্রাহক পিছু আয় বাড়বে। আর্থিক স্বাস্থ্য ভাল হবে এবং তারা পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ বাড়িয়ে বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারবে।
ভাল খবর দিয়েছে ব্যাঙ্কিং শিল্প। গত মার্চের শেষে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে মোট অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত নেমে এসেছে ২.৮ শতাংশে এবং নিট অনুপাত কমে হয়েছে মাত্র ০.৬%। অর্থাৎ তাদের অনাদায়ি ঋণের বোঝা অনেকটাই হালকা হয়েছে। আশা, আগামী দিনে এই অনুপাত আরও কমে ব্যাঙ্কগুলির হিসাবের খাতাকে আরও পোক্ত করবে। এর ফলে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা তাদের লাভের পরিমাণ, যা চাঙ্গা রাখবে ব্যাঙ্ক শেয়ারকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy