Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
দশ ব্যাঙ্ক-কে খরচ কমানোর নির্দেশ

আগে সংস্থা বাঁচুক, চাইছে ইউনিয়নও

দশটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে এ বার একগুচ্ছ শর্ত সাপেক্ষে মূলধন জোগানোর কথা বলেছে কেন্দ্র। যার মধ্যে রয়েছে লোকসানে চলা শাখা বিক্রি ও কর্মী-অফিসারদের সুযোগ-সুবিধা ঢেলে সাজার মতো শর্তও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০২:২৩
Share: Save:

এ ক্ষেত্রে অন্তত ‘না’ দিয়ে শুরু করার রাস্তা থেকে সরে এল ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি।

দশটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে এ বার একগুচ্ছ শর্ত সাপেক্ষে মূলধন জোগানোর কথা বলেছে কেন্দ্র। যার মধ্যে রয়েছে লোকসানে চলা শাখা বিক্রি ও কর্মী-অফিসারদের সুযোগ-সুবিধা ঢেলে সাজার মতো শর্তও। সেই কথা ইউনিয়নগুলি শেষমেশ কতটা মানবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু অন্তত আলোচনার টেবিলে বসার আগেই সেই সমস্ত প্রস্তাব নিয়ে ‘চলছে না-চলবে না’র পথে হাঁটেনি তারা। বরং উল্টে বলছে, সবার আগে তাদের লক্ষ্য ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচানো।

এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠকে বসবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেখানেই হবে। তবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচানো। সুবিধা ছাঁটাই নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট প্রস্তাব এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তা কতটা মানতে পারব, তা-ও এখন বলা সম্ভব নয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই বিচার করব।’’

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে দফায়-দফায় মূলধন জোগায় কেন্দ্র। কিন্তু এ বার তুলনায় ‘দুর্বল’ ১০টি ব্যাঙ্ক-কে বিনা শর্তে আর তা দিতে নারাজ অর্থ মন্ত্রক। মূলধন দেওয়ার আগে তারা বেশ কিছু লিখিত প্রতিশ্রুতি চায় ব্যাঙ্কগুলির থেকে। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতায় সদর দফতর থাকা তিন ব্যাঙ্ক। ইউকো ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক এবং এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক। কেন্দ্রের পরিকল্পনা হল, শর্তগুলি মানলে তবেই ওই দশ ব্যাঙ্ক-কে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের জন্য মোট ৮,৫৮৬ কোটি টাকা জোগাবে তারা। মূলধন পেতে যে সমস্ত শর্ত আরোপের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি হল:—

(১) খেলাপি ঋণে রাশ টানতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া (২) মূলধনের জন্য কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে বসে না-থেকে বাজার থেকেও তা সংগ্রহে পদক্ষেপ করা (৩) মূল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়, প্রয়োজনে এমন সম্পদ বিক্রি করা (৪) দেশে-বিদেশে লোকসানে চলা শাখা বিক্রি করা (৫) প্রয়োজনে কর্মী ও অফিসারদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা ঢেলে সাজা। তবে এই পদক্ষেপ সাময়িক। ব্যাঙ্কের আর্থিক হাল ফিরলে, তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

শর্তগুলি উল্লেখ করে ১০ ব্যাঙ্কের কর্ণধারকে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। সেখানে তারা বলেছে, প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, ইউনিয়ন এবং কেন্দ্রের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক সমঝোতাপত্র (মউ) সই করতে হবে। যার বয়ান ঠিক করার দায়িত্ব এসবিআই ক্যাপিটালের। ১০টি ব্যাঙ্কের অবস্থা খতিয়ে দেখে প্রতিটির জন্য আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করবে এসবিআই ক্যাপিটাল। মউ সই-ও হবে পৃথক ভাবে।

ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, মূলধন জোগাতে কর্মীদের সুবিধা ছাঁটার শর্ত আরোপের নজির আগে নেই। সেই প্রস্তাব নিয়ে ২৪ মার্চ ওই দশ ব্যাঙ্কে নিজেদের শাখা ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে এআইবিইএ। বেফি-র সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাসও জানান, ‘‘২৬ ও ২৭ মার্চ আমাদের ইউনিয়নের জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’

অনেকে বলছেন, ইউনিয়নের বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে বিরোধিতার সুর উঠতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার জন্য কি কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দায়ী? ঋণ খেলাপের খেসারতই বা তাঁরা দেবেন কেন? কিন্তু ব্যাঙ্ক বাঁচাতে ইউনিয়ন যে কথা বলতে রাজি, তাকেই বড় ‘বদল’ মানছেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE