বিদেশি আর্থিক সংস্থার উপর কর নিয়ে ধন্দ এবং গত আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে বেশ কিছু শিল্প সংস্থার হতাশাজনক আর্থিক ফলাফলের জেরে টানা পড়ে চলেছে শেয়ার বাজার। তবে ভাল আর্থিক ফল প্রকাশ করায় এ দিন বেড়েছে মারুতি-সুজুকির শেয়ার দর। সোমবারও সেনসেক্সের পতন হয়েছে ২৬০.৯৫ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক এসে থিতু হয় ২৭,১৭৬.৯৯ অঙ্কে, যা গত সাড়ে তিন মাসে সবচেয়ে কম। শুধু এই দিনই নয়, গত ৮ দিনের লেনদেনে ৬ দিনই পড়েছে সূচক। এই ক’দিনেই নিট হিসাবে সেনসেক্স পড়েছে ১১৭৮ পয়েন্ট।
বাজারের পতনের মূলে অবশ্য রয়েছে বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক। বিশেষ করে কেন্দ্রের ন্যূনতম বিকল্প কর বা ‘ম্যাট’-সহ আরও কিছু করের দাবির ব্যপারে সম্প্রতি ওই সব সংস্থার মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভয়ের কোনও কারণ নেই বলে কেন্দ্রীয় সরকার জানালেও ওই সব সংস্থা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী তারা গত শুক্রবারই ৭৭৫.৪৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
হালে শেয়ার বাজারে যে-প্রবণতা দেখা দিয়েছে তা হল, প্রথম দিকে সূচক উপরে উঠে লেনদেনের শেষে দ্রুত পড়ে য়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর মধ্যে নতুন কিছু দেখছেন না। তাঁদের মতে, এই অনিশ্চিত বাজারে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, লগ্নিকারীরা এই সময়ে বেশি দিন শেয়ার হাতে ধরে রাখতে সাহস পান না। দাম একটু বাড়লেই তা বিক্রি করে মুনাফার টাকা ঘরে তুলে নেওয়ার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে দেখা যায়।
এ দিনও লেনদেনের শুরুতে শেয়ার দর বাড়ছিল। এক সময়ে সেনসেক্স পৌঁছে যায় ২৭,৫৬৭ অঙ্কে। কিন্তু পরের দিকে মুনাফার টাকা তুলে নেওয়ার জন্য শেয়ার বিক্রির জেরে তা দ্রুত নীচের দিকে নেমে আসে। লেনদেনের পুরোটা সময় জুড়ে এ দিন সেনসেক্স ওঠানামা করেছে ৪২৬ পয়েন্ট।
বাজার ঘুরবে কবে? এ ব্যাপারে কেউই অবশ্য নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছেন না। তবে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘আমার ধারণা আরও ৭ থেকে ১০ দিন বাজার পড়বে। সেনসেক্স ২৫ হাজারের ঘরে নেমে আসতে পারে। তবে তার পর থেকে বাজার ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ কৌশিকের মতো বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতন শেয়ার বাজারকে শক্ত জমির উপর দাঁড় করাবে। এর ফলে শেয়ারের দরে যে-কৃত্রিমতা ছিল, তা দূর হয়ে যাবে। কৌশিক অবশ্য ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন, ‘‘এখন বিশেষ করে মাঝারি মাপের মূলধনের সংস্থার শেয়ার দর দ্রুত ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
বিজয় মাল্যের সঙ্গে দিয়াজিও-র বিবাদের জেরে এ দিন বিশেষ করে পড়েছে ইউনাইটেড স্পিরিটস ছাড়াও কিংফিশার-সহ ইউবি গোষ্ঠীর শেয়ার দর। ইউনাইটেড স্পিরিটের পরিচালন পর্ষদ মাল্যকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলায় তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে ওই দুই শিল্প গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দরে। উল্লেখ্য, বিপুল লোকসানের ফলে কিংফিশার নিয়ে ইউবি গোষ্ঠী চূড়ান্ত সমস্যার মধ্যে রয়েছে। বড় অঙ্কের ব্যাঙ্কঋণের বোঝা চেপেছে সংস্থার মাথার উপর।
তবে ভাল আর্থিক ফলাফলের জেরে এ দিন বিএসই-তে মারুতি-সুজুকির শেয়ার দর ৩.০২% ওঠে। ৫০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ। মূলত রের্কড সংখ্যক গাড়ি বিক্রি করে গত অর্থবর্ষে এ যাবৎ সবচেয়ে বেশি মুনাফা করল দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থা মারুতি-সুজুকি। সোমবার আর্থিক ফলাফল ঘোষণা করে সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৪-’১৫ সালে ৩,৭১১.২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে তারা। এর আগে ২০১৩-’১৪ সালে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছিল তারা, ২,৭৮৩.০৫ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy