Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ক্ষুব্ধ শ্রম দফতর

২৪০ জন ম্যানেজার ছাঁটাই হিন্দ মোটরে

কারখানার দরজা খোলা আর কর্মীদের বকেয়া মেটানো নিয়ে গত সপ্তাহেই কথা হয়েছে শ্রম দফতরের সঙ্গে। আগামী ১২ জুন ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা। এরই মধ্যে উত্তরপাড়া কারখানায় প্রায় ২৪০ জন ম্যানেজারকে ছাঁটাই করল হিন্দুস্তান মোটরস। যে কারখানার গেটে গত মাসে কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিস ঝুলিয়েছে তারা।

দরজা বন্ধই। সঙ্গে ছাঁটাইও। উত্তরপাড়া কারখানা।—ফাইল চিত্র

দরজা বন্ধই। সঙ্গে ছাঁটাইও। উত্তরপাড়া কারখানা।—ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

কারখানার দরজা খোলা আর কর্মীদের বকেয়া মেটানো নিয়ে গত সপ্তাহেই কথা হয়েছে শ্রম দফতরের সঙ্গে। আগামী ১২ জুন ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা। এরই মধ্যে উত্তরপাড়া কারখানায় প্রায় ২৪০ জন ম্যানেজারকে ছাঁটাই করল হিন্দুস্তান মোটরস। যে কারখানার গেটে গত মাসে কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিস ঝুলিয়েছে তারা।

সংস্থা সূত্রে খবর, শুক্রবারই সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারদের ছাঁটাইয়ের ওই নোটিস ধরিয়েছে হিন্দ মোটর। তবে ফিনান্স এবং এইচআর বিভাগে কিছু ম্যানেজারকে এখনও রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হিন্দ মোটরের অবশ্য দাবি, সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ম্যানেজমেন্ট ঢেলে সাজার কাজ চলছে গত দু’তিন বছর ধরেই। তা ছাড়া, কারখানার কাজ চালু রাখতে যে সমস্ত কর্মীদের একান্ত প্রয়োজন, তাঁদের রাখা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে দেশের সব থেকে পুরনো গাড়ি নির্মাতা।

তবে সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলার মধ্যেই ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ রাজ্য এবং কর্মী সংগঠনগুলি। এ দিন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “হ্যাঁ, এই ঘটনা শুনেছি। যখন এ নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন এই ধরনের পদক্ষেপ অবাঞ্ছনীয় ও রীতিবিরুদ্ধ।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যত দূর জানি, ওখানে মোট কর্মীসংখ্যা ২,৩০০। যার মধ্যে ম্যানেজার ৩০০ জন। এই ধরনের কারখানায় যা খুব একটা স্বাভাবিক নয়।” তাঁর অনুমান, ম্যানেজারের নামে সুপারভাইজর স্তরের কর্মীও ছাঁটাই হয়ে থাকতে পারেন। মন্ত্রীর ক্ষোভ, “যদি তা হয়ে থাকে, তবে সেই বার্তা যথেষ্ট খারাপ।”

আগামী ১২ জুন শ্রম সচিবের ঘরে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং কর্মী সংগঠনগুলিকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে শ্রম দফতর। সেই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের এমন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মন্ত্রীর ইঙ্গিত, ওই বৈঠকে সব কিছু নিয়েই হয়তো কথা বলার সুযোগ ছিল।

এ ভাবে হঠাৎ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে বিরক্ত ইউনিয়নগুলিও। কর্মী সংগঠন এসএসকেইউ-এর সম্পাদক আভাস মুন্সির অভিযোগ, “যে ভাবে ছাঁটাই করা হল, তার পিছনে কর্তৃপক্ষের চাল রয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য, এর মাধ্যমে কর্মীদের উপর আরও চাপ তৈরি করা। তা ছাড়া, সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলাকালীন এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক।” এ নিয়ে রাজ্যের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি।

এ দিন অবশ্য এই নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। আই এন টি টি ইউ সি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতের কথায়, “এই সিদ্ধান্তে কর্মীদের জন্য অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছি।” কারখানা খোলা ও শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর দাবি জানিয়ে তাঁর অভিযোগ, এর দায় পূর্বতন বাম সরকারের। পাল্টা অভিযোগে সিটু নেতা এবং কারখানার কর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুনীল সরকারের দাবি, “দায়ী বর্তমান সরকারই। মন্ত্রী বলেছিলেন, ডানলপ কী করে খুলতে হয়, তা তিনি জানেন। কিন্তু বাস্তবে তা দেখলাম না। হিন্দ মোটরেও সেই একই ছায়া দেখছি।”

উল্লেখ্য, মারুতির চাকা গড়ানোর আগে এ দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা ছিল হিন্দ মোটরই। মন্ত্রী-আমলাদের গাড়ি থেকে রাস্তার ট্যাক্সি সর্বত্র সদর্প উপস্থিতি ছিল তাদের গাড়ি অ্যাম্বাসাডরের। কিন্তু অর্থনীতির আগল খুলে যাওয়ার পর প্রতিযোগিতায় যুঝতে পারেনি তারা। চুক্তিমাফিক কখনও মিৎসুবিশির যাত্রী-গাড়ি, তো কখনও হাল্কা বাণিজ্যিক গাড়ি তৈরির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু হালে পানি পায়নি। ক্ষতির বোঝা ক্রমশ বেড়েছে। এক সময় পুঞ্জীভূত লোকসান ছাপিয়ে গিয়েছে নিট সম্পদকেও। আর এ সব কিছুর পরেই কাজ বন্ধের নোটিস। এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় কর্তৃপক্ষের। এবং তার পর গত সোমবার কর্মীদের বকেয়া মেটাতে আংশিক অগ্রিম বেতন দিয়েছিল হিন্দুস্তান মোটরস।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE