টানা পাঁচ বছর পর মিলল মুক্তি। কিন্তু তাতেও যেন উদাসীন বোয়ে বার্গডাল। মার্কিন সেনার এই সার্জেন্ট গত পাঁচ বছর তালিবানের হাতে বন্দি ছিলেন। অবশেষে ওবামা প্রশাসনের ‘বিতর্কিত’ কূটনীতির সৌজন্যে শনিবার মুক্তি পেলেন তিনি। ‘বিতর্কিত’ কারণ বোয়ের মুক্তির বদলে বন্দি পাঁচ তালিবান জঙ্গিকে ছেড়ে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
আর এই নিয়েই ধুন্ধুমার বেধেছে মার্কিন মুলুকে। তথ্য বলছে, ইরাক-আফগানিস্তানের যুদ্ধে যে ক’জন মার্কিন সেনা তালিবানের হাতে বন্দি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র বোয়েই এত দিন মুক্তি পাননি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে তাঁর এই মুক্তি ওবামা সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়াবে। কিন্তু ‘রিপাবলিকান’দের একটা অংশের দাবি, সার্জেন্টের এই মুক্তির বদলে যে ভাবে পাঁচ তালিবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ওবামা প্রশাসন, তাতে নেতিবাচক বার্তাই যাবে গোটা বিশ্বের কাছে। আর এর ফলে সুবিধা হবে তালিবানেরই। কারণ তারা বুঝে গেল সেনাবাহিনীর সদস্যদের মুক্তি দিতে ঠিক কতটা মরিয়া ওবামা প্রশাসন। ফলে ভবিষ্যতে নিজেদের অন্যায্য দাবিদাওয়া আদায় করতে হলে তারা মার্কিন সেনা অপহরণের আপাত ‘সহজ’ পথই বেছে নেবে। কারণ তাতে দাবি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা।
ঠিক যেমন ভাবে বোয়ের মুক্তির বদলে নিজেদের পাঁচ জঙ্গিকে মুক্ত করল তারা। দু’পক্ষের এই দৌত্যে অবশ্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছে কাতার। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ২০০৯ সালে তালিবানের হাতে অপহৃত হন বোয়ে। আর ২০১১ সাল থেকে শুরু হয় মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তার পর গত বছরের মাঝামাঝি আচমকাই তালিবানের প্রতিনিধিরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় উৎসাহ প্রকাশ করে। কিন্তু দাবি করে সরাসরি নয়, কোনও মধ্যস্থের মাধ্যমেই আলোচনা করতে চায় তারা। এর পর মার্কিন প্রশাসন দাবি করে, বোয়ে যে এখনও বেঁচে আছেন, আগে তার প্রমাণ দিক তালিবান। তখনই একটি ভিডিও মার্কিন প্রশাসনকে পাঠায় তারা। সেখানে প্রায় পাঁচ বছর বাদে বন্দি সার্জেন্টকে ফের দেখতে পায় ওবামা সরকার। সিদ্ধান্ত হয়, মুক্ত করতে হবে বোয়েকে। আর তার পরিবর্তেই তালিবানের শর্ত মেনে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের পাঁচ সদস্যকে। যাদের মধ্যে রয়েছে মোল্লা মহম্মদ ফজল। যে কি না তালিবান জমানায় আফগানিস্তানের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিল।
এমন ‘হেভিওয়েট’ বন্দিকে কিউবার ‘গুয়ান্তানামো বে’-র জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হল শনিবার। সঙ্গে ছিল আরও চার জঙ্গি। তবে পুরোটাই হল বোয়ের মুক্তির খবর আসার পর। আঠারো জন সশস্ত্র তালিবান জঙ্গির কড়া প্রহরার মাঝেই শনিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশ থেকে মার্কিন বিমানে উঠলেন বোয়ে। সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার ‘স্পেশ্যাল অপারেশনস্ গ্রুপ’-এর কিছু সদস্য। বিমানে উঠে একটি ছোট্ট চিরকুটে প্রায় অবোধ্য হাতের লেখায় বোয়ে লিখলেন, ‘এসএফ’? সঙ্গীদের জবাব এল, “হ্যাঁ, তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি।” শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোয়ে। পাঁচ বছরের কষ্ট, জমা অভিমান সব বেরিয়ে আসে মুহূর্তে। মার্কিন বিমান তখন জার্মানির দিকে রওনা দিয়েছে। সেখানে এক হাসপাতালে চিকিৎসার পর বোয়েকে আমেরিকায় আনা হতে পারে বলে সেনা সূত্রে খবর।
আমেরিকা তখন বিহ্বল। ‘রোজ গার্ডেন’-এ দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিষয়টি ঘোষণা করে বলেন, “আমেরিকা তার সেনাবাহিনীর সদস্যদের কথা কখনও ভোলে না।” পাশে বোয়ের বাবা-মা রবার্ট এবং জ্যানি। ছেলের মুক্তির খবর শুনে বিহ্বল রবার্ট কথাও বললেন। আম জনতা মানে বুঝল না। কারণ পুরোটাই পুসতু ভাষায় বললেন তিনি। শুধু জানা গেল, পাঁচ বছর আফগানিস্তানে থেকে বোয়ে ইংরিজি প্রায় ভুলেছেন। পুসতুটাই মোটামুটি সড়গড়। তাই সে ভাষাকেই সম্বল করে বোয়েকে মনে করালেন রবার্ট, “আমি তোমার বাবা।”
আমেরিকা দেখল, ইষ্পাত কঠিন সৈনিক সন্তানের মুক্তি তাঁর বাবাকেও কতটা আবেগপ্রবণ করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy