তিন দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সঙ্গে স্ত্রী মিশেল। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ঘন নীলের উপর ফুলছাপ ফ্রক-কাটের পোশাক। হাঁটু ছোঁয়া দৈর্ঘে খোলামেলা পা। গত কাল এয়ার ফোর্স ওয়ানে চেপে এই পোশাকেই দিল্লি ছেড়েছিলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
কিন্তু রিয়াধে যখন পা ফেললেন, পরনে টপ-ট্রাউজার্স ও লম্বা জ্যাকেটের ঢাকা পোশাক। তবু আপাদমস্তক কেন ঢাকা নেই কাপড়ে, কেন মাথায় একটা স্কার্ফ অন্তত নেই, রক্ষণশীল সৌদি আরবে একের পর এক প্রশ্নবাণ থেকে রেহাই পেলেন না খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্ত্রীও। শুধু তা-ই নয়, মহিলা হয়েও সর্বসমক্ষে কী ভাবে সৌদি আরবের পুরুষ মন্ত্রীদের সঙ্গে হাত মেলালেন তিনি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। স্বাভাবিক ভাবেই সমালোচনার ঝড় তুঙ্গে।
রাজা আবদুল্লার মৃত্যুর খবর পেয়ে ভারত সফরের মাঝখান থেকেই বাকি সফর বাতিল করে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হন ওবামারা। তাজমহল দেখতে না পেয়ে তখনই মুখ ভার হয়েছিল মিশেলের। কিন্তু সৌদি আরব সফরের পর আরওই বিমর্ষ দেখিয়েছে মিশেলকে। কারণ ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার পরও পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। টুইটারে একের পর এক খোঁচা, “মিশেল মাথা ঢাকেননি কেন?” অনেকেরই দাবি, মিশেল যখন ভ্যাটিকানে গিয়ে পোপের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তো তিনি কালো কাপড়ে মাথা ঢেকেছিলেন। জাকার্তার এক ধর্মস্থানে গিয়েও একই কাজ করেন। তা হলে রাজা আবদুল্লার প্রয়াণের খবর পেয়ে কেন মাথা ঢাকলেন না। পাল্টা জবাবও মিলেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। মাথা কাপড়ে ঢাকলেই সম্মান দেখানো হয় না।
আসলে শুধু হিজাব নয়, সমালোচনার মুখে পড়েছে মিশেলের উজ্জ্বল নীল জ্যাকেটও। মঙ্গলবার মিশেল ছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন প্রাক্তন বিদেশসচিব কন্ডোলিজা রাইজ ও সংখ্যালঘু বিষয়ক নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি। তাঁদেরও মাথায় হিজাব ছিল না। কিন্তু পরনে কালো পোশাক থাকায় সে অর্থে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। উল্লেখযোগ্য, এর আগে হিলারি ক্লিন্টন কিংবা জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশও সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তাঁরাও কিন্তু মাথা হিজাবে ঢাকেননি। তাই অনেকেরই মতে, শুধু হিজাবই নয়, মিশেলের পোশাক বাছাই আসলে কাঠগড়ায় তুলেছে তাঁকে।
বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া সৌদি টিভি চ্যানেলের একটি ভিডিও। তাতে রাজা সলমনের সঙ্গে মিশেলের সাক্ষাৎপর্ব দেখানোর সময় ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে ফার্স্ট লেডিকে। অনেকেরই দাবি, মিশেলর মাথায় হিজাব না থাকার জন্যই এই কাণ্ড।
আমেরিকার সৌদি দূতাবাস অবশ্য এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। টুইটারে তাদের দাবি, “ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মিশেলের ঝাপসা করে দেওয়া ছবিটি ভুয়ো। ফেসবুক না দেখে সত্যিটা খতিয়ে দেখুন।” সৌদি প্রশাসনকে সমর্থন জানিয়েছেন সাংবাদিকদের একাংশও। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক সাংবাদিক যেমন জানালেন, তিনি সলমনের সঙ্গে বারাক-মিশেলের আলাপপর্বের সরাসরি সম্প্রচার টিভিতে দেখেছিলেন। তাতে মিশেলকে ঝাপসা করে দেখানো হয়নি। তাঁর মতে, ইউটিউবে যে ভিডিওটি ছাড়া হয়েছে, কারসাজি করা হয়েছে তাতে। এই ঘটনায় সৌদি টিভি চ্যানেলটির কোনও দায় নেই। কিন্তু যুক্তি-তর্কের গণ্ডি ছাড়িয়েছে বিতর্কের ঝড়।
সৌদি আরবের শরিয়ত আইন অনুযায়ী মেয়েদের বোরখা পরা, মাথা হিজাবে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। নিষিদ্ধ নারী-পুরুষ মেলামেশা। মহিলারা তা মেনেও চলে। বিদেশিদের উপর অবশ্য অতটা কড়াকড়ি নেই। কিন্তু গত কাল ওবামা দম্পতি রিয়াধ বিমানবন্দরে নামার পর সৌদি আধিকারিকদের প্রতিনিধি দলটি একে একে হাত মেলান তাঁদের সঙ্গে। অনেকেই মিশেলের দিকেও হাত বাড়িয়ে দেন। তিনিও স্মিত হেসে হাত মেলান। কেউ কেউ আবার এ সব এড়িয়ে গিয়ে স্রেফ মাথা হেলিয়ে স্বাগত জানান। কারণ, সৌদি আরবের রক্ষণশীল সমাজে কোনও পুরুষ পরস্ত্রীর হাত ধরতে পারেন না। সেখানে ওবামা-পত্নীর সঙ্গে কী ভাবে সলমনের আধিকারিকরা হাত মেলালেন, সৌদি আরবে প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ইউটিউবে ওই ভিডিওটি দেখার পর তাই অনেকেরই দাবি, ‘বিতর্কিত’ বলেই ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে মিশেলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy