(বাঁ দিকে) জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এবং স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
১৪ বছরের আইনি যুদ্ধের শেষে সোমবার ব্রিটেনের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। এর পরে আমেরিকা অধিকৃত ভূখণ্ডে গিয়ে আইন জটিলতা কাটিয়ে গোপন সামরিক ফাইল ফাঁস করায় অভিযুক্ত, উইকিলিক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বুধবার চার্ডার্ড ফ্লাইটে তাঁর দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছলেন।
আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডস থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে অ্যাসাঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরানোর জন্য সমাজমাধ্যমে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী স্টেলা। বিমানভাড়া ঋণ মেটাতে পাঁচ লক্ষ ২০ হাজার ডলার (প্রায় চার কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা) অর্থসাহায্যের সেই আবেদনে বিপুল সাড়া মিলেছে। বুধবার রাতেই ৫২ বছরের অ্যাসাঞ্জ ক্যানবেরা ফিরেছেন। এ বার দুই সন্তানের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার পালা। এই প্রথম জেলের গরাদের বাইরে যারা দেখতে চলেছে তাদের বাবাকে।
লন্ডনের বেলমার্শ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেই হিথরো বিমানবন্দর থেকে চার্টার্ড বিমানে ব্যাঙ্কক গিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে রওনা হয়েছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত দ্বীপপুঞ্জ নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসের অন্তর্গত সাইপানের উদ্দেশে। সাইপানেই মঙ্গলবার আমেরিকান ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তাঁর মামলার শুনানি হয়। সেখানেই তাঁকে ‘মুক্ত’ ঘোষণা করেন বিচারক।
আদালতের নথি থেকে জানা গিয়েছে, ‘উইকিলিকস’ ওয়েবসাইটে আমেরিকা সরকারের গোপন নথি ফাঁসের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। ওই অপরাধে তাঁর ৬২ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারত। কিন্তু আমেরিকার হেফাজতে আর অ্যাসাঞ্জকে থাকতে হল না। কারণ, পাঁচ বছর তিনি ব্রিটেনের জেলে ছিলেন, তাই তাঁর জেলের সাজার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত কয়েক লক্ষ গোপন ফাইল ২০১০ সালে নিজের ‘হুইসিলব্লোয়িং’ ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করে দিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তার মধ্যে একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে। অভিযোগ ওঠে, ২০০৭ সালে ইরাকে অভিযানের সময় আমেরিকান সেনার ওই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই সাংবাদিকও মারা গিয়েছিলেন। ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বিশ্বে।
ইতিমধ্যে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দু’জন মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হলেই তাঁকে আমেরিকায় পাঠানো হবে, এই আশঙ্কায় অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক আশ্রয় নেন লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে। সেখানেই ছিলেন ২০১৯ পর্যন্ত। এর পরে ইকুয়েডর সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় ব্রিটিশ পুলিশ দূতাবাসে ঢুকে গ্রেফতার করেছিল অ্যাসাঞ্জকে। তত দিনে বহু মানুষের চোখে তিনি বাক্স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ। অনেকের চোখে একটি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা খলনায়ক। পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রত্যাহার করে সুইডেন।
২০২৩ সালে অ্যাসাঞ্জের আমেরিকায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে সিলমোহর দেয় লন্ডন হাই কোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ আটকাতে শেষ চেষ্টা করেন অ্যাসাঞ্জ। মার্চে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ স্থগিত রেখে ব্রিটিশ আদালত জানায়, উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমেরিকাকে। চলতি বছরের মে মাসে ব্রিটিশ আদালতের দুই বিচারক জানান, প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ। আর জুনে আমেরিকার বিচার বিভাগ এবং উইকিলিক্স জানায়, তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy