আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। —ফাইল চিত্র।
তাইওয়ানের স্বাধীনতার দাবিকে আমেরিকা সমর্থন করে না বলে চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এর ফলে তাইওয়ানে চিনা দখলদারির পথ প্রশস্ত হতে পারে বলে মত কূটনীতিকদের। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। বস্তুত গত বছরেই খোদ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, চিন তাইওয়ান আক্রমণ করলে আমেরিকান বাহিনী তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। ফলে এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সুর পুরোপুরি বদলে ফেলেছে বলে মত কূটনীতিকদের।
তাইওয়ান প্রণালী তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসী পদক্ষেপ, চিন-রাশিয়া সখ্য, আমেরিকায় চিনা গুপ্তচর বেলুনের আবির্ভাব-সহ নানা কারণে সম্প্রতি গভীর প্রভাব পড়েছে আমেরিকা-চিন সম্পর্কে। সেই জটিলতা কাটাতেই বেজিংয়ে পা রেখেছিলেন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। পাঁচ বছর পরে চিন সফরে এলেন কোনওআমেরিকান বিদেশসচিব।
রবিবার চিনা বিদেশমন্ত্রী ছিন কাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। আলোচনা হয় চিনা বিদেশসচিব ওয়াং ই-এর সঙ্গেও। পরে তাঁর সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হবে কি না তা নিয়ে ছিল ধন্দ। তা কাটিয়ে সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে ৩৫-এ ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন শি। বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৫টা নয় নাগাদ। চিনা সরকার সূত্রে খবর, ব্লিঙ্কেনকে শি বলেছেন, একটি সুস্থ ও ভারসাম্যযুক্ত চিন-আমেরিকা সম্পর্ক প্রয়োজন পৃথিবীর। আমেরিকার অবস্থানকে সম্মান করে চিন, তাকে সরিয়ে ফেলতে চায় না। কিন্তু একই রকম সম্মান আমেরিকার থেকেও আশা করে। আলোচনার মোড় এর পরে ঘুরে যায় চিন-রাশিয়া সম্পর্ক এবং চিনে আমেরিকার উন্নত প্রযুক্তি রফতানিতে অনীহার দিকে। ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই চিন ও আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তুচ্ছ বিষয়েও সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সেটা ঠিক করার উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক। বৈঠকের পরে বেজিংয়ের আমেরিকান দূতাবাসে সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। সেখানে স্পষ্টই জানান, আমেরিকা ‘এক চিন’ নীতিতে বিশ্বাসী। তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে ওয়াশিংটন সমর্থন করে না। তবে তাইওয়ান প্রণালীতে চিনের আগ্রাসী পদক্ষেপকেও সমর্থন করে না। বেজিং তাইওয়ানকে ‘বৃহত্তর চিন’-এর অংশ বলে মনে করলেও তা মানতে রাজি নয় তাইপেই। সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে বেশ কয়েক বার সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেজিং। আমেরিকা এ নিয়ে হুঁশিয়ারিও দেয় বেজিংকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি জানান, তাইওয়ানে চিনা দখলদারি হলে ওই দ্বীপরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ করবে আমেরিকান বাহিনী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে চিনে জাপানি সেনাকে রুখতে হাত মিলিয়েছিলেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ও কুয়োমিন্টাং সরকারের প্রধান জেনারেল চিয়াং কাই শেক। বিশ্বযুদ্ধের শেষে ফের কমিউনিস্ট বাহিনী ও জেনারেল চিয়াং কাই শেকের বাহিনীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ ফের শুরু হয়। কমিউনিস্টদের কাছে পরাজিত হয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেন চিয়াং। তার পর থেকেই তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। মূলত আমেরিকান রক্ষাকবচের ফলেই তাইওয়ান এখনও পর্যন্ত চিনা দখলদারি এড়াতে পেরেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
কূটনীতিকদের একাংশের মতে, আমেরিকা যে ‘এক চিন’ নীতিতে বিশ্বাসী, এ কথা ওয়াশিংটনের কর্তাদের মুখে আগে শোনা গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেজিংয়ে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন না করার কথা বলে চিনের হাত অনেক বেশি শক্ত করলেন ব্লিঙ্কেন। অবশ্য আমেরিকান বিদেশসচিব জানিয়েছেন, চিন-তাইওয়ান বিবাদে কোনও পক্ষের তরফেই একতরফা পদক্ষেপ করে স্থিতাবস্থা বদলের চেষ্টাকে আমেরিকা সমর্থন করে না। কিন্তু যে বেজিং নানা ক্ষেত্রে সরাসরি ভূখণ্ড দখল করতে পিছপা হয় না, তারা এই হুঁশিয়ারিতে কতটা কান দেবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কূটনৈতিক ওসামরিক শিবিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy