আফগানিস্তান নিয়ে বিশেষ বৈঠকের আগে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী-সহ প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে। ছবি পিটিআই।
আফগানিস্তান প্রসঙ্গে নয়াদিল্লিতে আট দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠককে স্বাগত জানাল তালিবান। তাদের অন্যতম মুখপাত্র সুহেল শাহিন একটি ভারতীয় চ্যানেলকে জানিয়েছেন, তাঁরা ওই বৈঠককে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন এবং আফগানিস্তানের শান্তি ও সুস্থিতির পক্ষে তা সহায়ক হবে বলে আশা করছেন। কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামাবাদে এ দিনই চিন, রাশিয়া ও আমেরিকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘ট্রইকা প্লাস’ বৈঠকে বসেছে পাকিস্তান। সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন তিন দিনের পাকিস্তান সফরে আসা তালিবান সরকারের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিও।
দিল্লির বৈঠক প্রসঙ্গে সুহেল শাহিন বলেছেন, ‘‘ওঁরা (নিরাপত্তা উপদেষ্টারা) যদি বলে থাকেন যে, তাঁরা আফগানিস্তানের মানুষ, শান্তি ও সুস্থিতির লক্ষ্যে কাজ করবেন, তা হলে সেটা তো আমাদেরও লক্ষ্য। আফগানিস্তানের মানুষ গত কয়েক বছরে অনেক ভুগেছেন। এখন তাঁরা শাস্তি চান। এখন আমরা চাই দেশে অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হোক, নতুন প্রকল্প শুরু হোক। আমরা চাকরির সুযোগ তৈরি করতে চাই। কাজেই ওঁরা যা বলেছেন, আমরা তার সঙ্গে একমত।’’ শাহিন জানান, আফগানিস্তানের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নীচে। কাজেই দারিদ্র দূরীকরণ, চাকরি ও শান্তির লক্ষ্যে যে কোনও পদক্ষেপই স্বাগত।
নাম না করে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলে দিল্লি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানের মাটি যেন সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহৃত না হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদও বলেছেন, কেউ আফগানিস্তানের মাটিকে অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না। তালিবান তা বরদাস্ত করবে না। দিল্লির বৈঠক প্রসঙ্গে জ়বিউল্লা বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবেশীরা আফগানিস্তান নিয়ে ভাবিত। তাই এই আলোচনাচক্রের কেন্দ্রে ছিল আফগানিস্তান ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা। নিরাপত্তা ও অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হলে সব দেশই লাভবান হবে।’’ আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে জ়বিউল্লা বলেন, ‘‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী সমস্ত দেশের কাছে আমরা সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।’’
আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়া এড়াতে বিশ্বকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। প্রয়োজনে পাকিস্তান সব সময়ে আফগানদের পাশে রয়েছে বলে জানিয়ে ইমরান আজ বলেন, ‘‘মুত্তাকি ও তাঁর সঙ্গে সফরকারী প্রতিনিধিদলকে পাকিস্তানের তরফে যাবতীয় মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আফগানদের জন্য খাবার, চিকিৎসার সামগ্রী ও শীতের আশ্রয়ের উপকরণ পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তানে আসা সমস্ত আফগানকে বিনামূল্যে কোভিডের টিকা দেওয়া হবে।’’ ‘ট্রইকা প্লাস’ বৈঠকের সূচনায় আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানান পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও। তিনি বলেছেন, ‘‘বিপর্যয়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আফগানিস্তান। তারা বেতন দিতে পারছে না। সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। কাজেই বিশ্বের উচিত জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য করা।’’ পাক বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, তালিবান তাদের সরকারের স্বীকৃতির লক্ষ্যে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। অতীতে আফগানিস্তান একঘরে হয়ে পড়ায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন যেন সেই ভুল আর না করে। আফগান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গচ্ছিত রাখা ৯৫০ কোটি ডলার আটকে রেখেছে আমেরিকা। কুরেশির আর্জি, ওই অর্থ এ বার ছেড়ে দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে আফগান সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা সম্ভব হবে। কুরেশি বলেছেন, ‘‘প্রত্যেকেই চায় আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের সমস্যা উপযুক্ত ভাবে সামাল দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy