গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ-বিতর্কের আঁচ ভারত এবং আমেরিকার সামগ্রিক কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পড়বে না বলে আগাম জানিয়ে রাখল ওয়াশিংটন। যদিও কূটনৈতিক মহলের ধারণা, শুধু আমেরিকাই নয়, দেশের সামগ্রিক বিদেশনীতিতেই এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। এর পরে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি দরকষাকষি করতেই পারেন।
আজ হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জঁ পিয়ের বলেছেন, “আদানি সংস্থার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা অবশ্যই জানি। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে বিচার দফতর এবং এসইসি (সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) বিশদে জানাতে পারবে। আমি শুধু বলতে পারি, ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত পোক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। আমাদের যুথবদ্ধতা বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা এবং দু’দেশের মানুষের সম্পর্কের ফসল। আমরা আত্মবিশ্বাসী, এই বিষয়গুলিকে নিয়ে আমরা এগোবো এবং নতুন যে বিষয় তৈরি হয়েছে (আদানি) তা অতিক্রম করেই এগিয়ে চলব।”
প্রশ্ন, এত বেশি করে বলতে হচ্ছে কেন যে সম্পর্কে কোনও আঁচ পড়বে না? কূটনৈতিক মহল মনে করছে, সামগ্রিক বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে চলেছে। ভারত-আমেরিকা পরিমাণু চুক্তির অন্যতম কারিগর তথা আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রণেন সেন বলছেন, “আজকের দিনে বিদেশনীতির সবচেয়ে বড় উপাদান অর্থনীতি। তা সে বিনিয়োগই হোক, অথবা বাণিজ্য। দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ প্রযুক্তির বিনিয়োগের ক্ষেত্রেপ্রয়োজন হল, বিনিয়োগ যে দেশে হচ্ছে সেখানে হঠাৎ কর নীতির বদল যেন না ঘটে। দুর্নীতির অভিযোগে অস্থিরতা যেন না আসে। এ ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তার বৃহত্তর প্রভাব শুধু আমেরিকা নয়, সার্বিক বিদেশনীতির উপরেই পড়া সম্ভব।” তাঁর বক্তব্য, টু জি কেলেঙ্কারির সময় আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যে সব বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছে, আদালতের নির্দেশে স্পেকট্রাম বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তাদের সমস্যা হবে। হয়েওছিল তাই।
আমেরিকার নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ঢুকলেই যে বিষয়টি ভারতের জন্য সহজ হয়ে যাবে এমনটাও নয়— মতামত রণেনের। বরং মোদী সরকারের এ হেন ‘দুর্বল বিন্দু’ যদি ট্রাম্পের হাতে থাকে, তা হলে ‘ডিল মেকার’ হিসেবে পরিচিত এবং দেনাপাওনার কূটনীতিতে বিশ্বাসী ট্রাম্পের পক্ষে সুবিধা হবে, ভারতের সঙ্গে দরকষাকষি করা। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার সংস্থাগুলির জন্য আরও বেশি করে ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এমনিতেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকার পণ্যের উপরে শুল্ক বসানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ‘বড় রকমের অপব্যবহার’ করে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। এ বার তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে সামনে রেখে ভারত থেকে অটোমোবাইল, বস্ত্র, ওষুধ, ওয়াইন রফতানিতে বাধা তৈরি করতে পারেন। ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া নীতি নিলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিসমস্যায় পড়বে।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো চিন থেকে আমদানি করা পণ্যে যতখানি শুল্ক চাপাবে, সেই হারে ভারতীয় পণ্যের উপরে শুল্ক চাপাবে না। কিন্তু শুল্ক ছাড়া অন্যান্য বাধা তৈরি করবে। অন্য দিকে, আমেরিকার সংস্থাগুলির জন্য ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার দাবি করবে।’’
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আমেরিকায় আদানিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের হলে বিচারপ্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সময় লাগবে। কারণ, ইতিমধ্যে বাইডেন প্রশাসন বিদায় নেবে। নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি যে চার্জশিট দায়ের করেছেন, সেই ব্রেয়ন পিস ইস্তফা দেবেন। ট্রাম্প সেখানে নিজের পছন্দের লোককেনিয়োগ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy