পুলিশের সঙ্গে বচসায় পড়ুয়ারা। টুইটার থেকে নেওয়া।
গণ অসন্তোষের ধিকিধিকি আগুনে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কা। শনিবারই অসন্তোষের আগুন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গোটা দ্বীপরাষ্ট্রে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় নেটমাধ্যম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষে সরকার। কিন্তু তাতেও অসন্তোষের জোয়ার ঠেকানো যাচ্ছে না। রবিবার কার্ফু উপেক্ষা করে পথে নামলেন পড়ুয়ারা। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, লাঠি চালিয়ে, আকাশে গুলি ছুঁড়েও তাঁদের বাগে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।
শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় পেরাদানিয়া চত্বর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে প়ড়েছেন প়ড়ুয়ারা। পুলিশ পড়ুয়াদের আটকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং জলকামান ব্যবহার করছে। কিন্তু তাতেও পরোয়া নেই পড়ুয়াদের। সব কিছুকে কার্যত অগ্রাহ্য করে তাঁরা আওয়াজ তুলছেন ভয়াবহ আর্থিক অবস্থার বিরোধিতায়। ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে উঠছে আকাশ ফাটানো স্লোগান।
অন্য দিকে রাজধানী কলম্বোয় শতাধিক মানুষের শান্তিপূর্ণ মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল। পুরোভাগে ছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের বিরোধী নেতারা। কিন্তু বিরোধী দলনেতার বাড়ির ঠিক সামনেই সেই মিছিল থামিয়ে দেওয়া হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সেই সময় পুলিশের হাতে ছিল অ্যাসল্ট রাইফেল। তাহলে কি অসন্তোষ রুখতে শেষপর্যন্ত জমায়েতের উপর গুলি চালানোর কথা ভাবছে সরকার?
বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গণঅসন্তোষ যে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তা শ্রীলঙ্কার সরকারের অজানা নয়। তাই বিক্ষোভ ঠেকাতে সপ্তাহান্তে কার্ফু জারি শুরু হয়। সেই অনুযায়ী, শনিবার সন্ধে ৬টা থেকে কার্ফু শুরু হয়েছে, তা চলবে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু রবিবার সেই কার্ফু ভেঙে রাস্তায় নামলেন দলে দলে পড়ুয়া। শনিবার রাতের হিসেবে প্রায় সাতশো মানুষকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু রবিবার যখন পড়ুয়ারা পুলিশের একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করলেন, তখন কত জন গ্রেফতার হয়েছেন, তার কোনও হিসেব এখনও পর্যন্ত নেই।
ধুঁকছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। ফুরিয়ে গিয়েছে দেশে গচ্ছিত বিদেশি অর্থের ভাঁড়ার। করোনা অতিমারির মার এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের জেরে মূলত পর্যটনের উপর নির্ভরশীল শ্রীলঙ্কায় রীতিমতো হাহাকার পড়ে গিয়েছে। জ্বালানি থেকে খাদ্য, ওষুধ থেকে নেটমাধ্যম— সবই অমিল। অথচ অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েই ২০১৯-এ বিপুল ভাবে জিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন পার্সি মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
পরিস্থিতি সামলাতে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের কাছে ‘বেলআউট’ প্যাকেজ দাবি করেছে শ্রীলঙ্কা। ভারত ও চিনের কাছ থেকে আপৎকালীন ঋণেরও দরবার করেছে। নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি ডলার সাহায্য পাঠিয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকে ডিজেল ভর্তি একাধিক জাহাজও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বন্দরে নোঙর করেছে বলে খবর। সব মিলিয়ে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মুখে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy