ইরাকে অপহৃত রাজেশ কুমার ফিরে এলেন জম্মুর বাড়িতে। ছবি: পিটিআই
দেশের অবস্থা এমনিতেই সঙ্গিন। তার মধ্যে ইরাক যাতে টুকরো টুকরো না হয়ে যায়, সে জন্য জরুরি কূটনৈতিক পদক্ষেপ করলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। গত কাল বাগদাদে প্রধানমন্ত্রী নুর আল মালিকির বৈঠকের পরে আজ এক প্রকার অঘোষিত ভাবেই ইরাকের স্বশাসিত কুর্দ অঞ্চলে চলে যান জন কেরি।
সুন্নি জঙ্গিদের ঠেকাতে বাগদাদে কাল যে বার্তা দেন, আজ আরবিলে কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানিকে সে কথাই বলেছেন কেরি। বারজানিকে তিনি বোঝান, ইরাকের ঐক্য বজায় রাখতে এগিয়ে আসুন। ইরাকের নেতা কে হবেন, সেটা আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশ নয়, ইরাকের মানুষকেই ঠিক করতে দিন। তাঁর বক্তব্য, বাগদাদের সরকার এমন কোনও নীতির কথা ভাবুক যাতে ইরাকে ‘সংখ্যালঘু’ সুন্নি এবং কুর্দ সম্প্রদায় আরও কর্তৃত্ব পায়। বারজানি তাঁকে বলেন, “ইরাক যে সঙ্কটের মুখোমুখি, তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা আমরাও করছি।”
ইরাকি কুর্দরা সাদ্দামের নীতি থেকে দূরে থেকে নিজেদের স্বশাসিত এলাকাবাসী বলেই দাবি করতেন। মালিকির সঙ্গেও কুর্দের কোনও দিনই সদ্ভাব ছিল না। সম্প্রতি কুর্দ বাগদাদকে পাওনা লভ্যাংশ না দিয়ে তুরস্কের মাধ্যমে তেল রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিরোধ চরমে ওঠে। ইরাকের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটে শক্তিশালী কুর্দ প্রেসিডেন্ট বারজানির সমর্থন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মালিকি প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, কুর্দদের সমর্থনে স্থায়ী সরকার হলে ইরাকি সেনাও জঙ্গিদমনে অনুপ্রেরণা পাবে।
কূটনৈতিক স্তরে যত চেষ্টাই চলুক না কেন, ইরাক এখনও অশান্তই। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনকে ২০০৬ সালে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন যিনি, সেই বিচারক রউফ আব্দুল রহমানকে অপহরণ করে হত্যা করেছে আইএসআইএস জঙ্গিরা। ১৬ জুন তাঁকে অপহরণ করে দু’দিন পরে মেরে ফেলে জঙ্গিরা। যদিও ইরাক সরকার এ খবর স্বীকার করেনি। তবে গত সপ্তাহে রউফকে যে জঙ্গিরা অপহরণ করেছে, তা মেনে নিয়েছে সরকার। প্রাণনাশের আশঙ্কায় বাগদাদ থেকে ছদ্মবেশে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন রউফ। সাদ্দামের প্রাক্তন ডেপুটি ইজ্জত ইব্রাহিম দৌরি (যিনি সুন্নিপন্থী জঙ্গিদেরও নেতা) তার ফেসবুক পেজে রউফের অপহরণের খবর জানিয়েছে।
এই অবস্থায় আজ আবার বায়ু সেনার হানায় মোট ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন ইরাকে। এর মধ্যে বাগদাদের উত্তরে বাইজি শহর জঙ্গিদের হাত থেকে দখল নিতে গিয়ে সেনা হামলায় মারা গিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। আহত ১৭। সরকারি ভাবে বলা হয়েছে এরা সাধারণ মানুষ। কিন্তু ইরাকি টেলিভিশনে দাবি করা হয়েছে, ১৯ জন জঙ্গিকে মারা হয়েছে। বাইজি তৈল শোধনাগার কবলে রাখতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। রাষ্ট্রপুঞ্জ আজ জানিয়েছে, জুন মাসে ইতিমধ্যেই ইরাকে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছে এক হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ।
ইরাকে লড়াইয়ের এলাকা থেকে আজ আরও ১৭ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। গত কালও উদ্ধার করা হয় ১৭ জনকে। অর্থাৎ এখনও লড়াইয়ের এলাকায় আটকে রয়েছেন মোট ৮৬ জন। ৩৯ জন অপহৃত ভারতীয়র মধ্যে প্রত্যেকেই অক্ষত আছেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের দাবি। তবে এঁদের মধ্যেই নদিয়ার খোকন শিকদার রয়েছেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। নিরাপদে রয়েছেন তিরকিতে আটক কেরলের ৪৬ জন নার্সও। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, তাঁরা হাসপাতালেই রয়েছেন। বাগদাদ বিমানবন্দরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ইরাক এবং ভারতের বাসিন্দাদের অভিবাসনে জট কাটাতে তৈরি করা হয়েছে একটি যুগ্ম কমিটি এবং হেল্পলাইন। তবে ইরাকে সেনা পাঠিয়ে আটক ভারতীয়দের উদ্ধার করা হবে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, “আমি কোনও জল্পনায় প্রশ্রয় দিতে চাই না।” গত বছর এক নির্মাণ সংস্থার হয়ে কাজ করতে ইরাকের বসরায় যান নদিয়ার তেহট্টের বেতাই গ্রামের বিশ্বজিৎ হীরা এবং তাপস মণ্ডল। দু’জনেই কাঠমিস্ত্রি। বিশ্বজিৎ বাড়ি ফিরেছেন শনিবার রাতে। তাপস মঙ্গলবার সকালে। তাঁরা জানিয়েছেন, “সমস্যা শুরু ৭ জুন। ঘরবন্দি হয়ে গেলাম। ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ। স্থানীয়দের কাছে শুনতাম সরকারের সঙ্গে আইএসআইএস জঙ্গিদের লড়াই হচ্ছে। বাইরে থেকে ভেসে আসত গুলি-গোলার আওয়াজ।” বিশ্বজিৎ বলেন, “১৮ জুন ভোরে আল-বসরা বিমানবন্দরে আসার পথে অন্তত ১৫ জায়গায় পাসপোর্ট পরীক্ষা করল সেনার মতো পোশাক পরা লোকজন। বিমানবন্দরে ভিড়। কেউ আমাদের মতো দেশে ফেরার জন্য ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত দেশ (ইরাক) ছাড়তে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy