করোনা বিধির প্রতিবাদে কানাডায় ট্রাকচালকদের বিক্ষোভ অব্যাহত। ছবি: রয়টার্স
দু’বছর কেটে গিয়েছে অতিমারিতে ভুগছে গোটা পৃথিবী। ৪০ কোটির উপরে সংক্রমণ। প্রাণ গিয়েছে ৫৮ লক্ষের বেশি মানুষের। এখনও জানা নেই, কবে শেষ হবে অতিমারি। এ অবস্থায় আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলি ঘোষণা করেছে, অতিমারিকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। এবং এই যুক্তিতে করোনা-বিধি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বারবারই বলছে, আরও ভয়ানক ভেরিয়েন্ট তৈরি হতে পারে ভবিষ্যতে। ফলে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যকর্তাদের জন্য আরও কঠিন সময় আসতে পারে বলেও জানিয়েছে হু।
হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনের বক্তব্য, এখনও অনেক রাস্তা হাঁটা বাকি। একটি আমেরিকান সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অতিমারি নিয়ে চলতে থাকা রাজনীতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন সৌম্যা। রাজনীতি যে হয়েছে, হচ্ছে ও হবে, তা উড়িয়ে দিতে পারবে না কেউই। সাধারণ মানুষের মন রাখতে, ভোট-ব্যাঙ্ক বাঁচাতে করোনা-বিধি লঘু করে দিচ্ছে বহু দেশ। কিন্তু এখনই অতিমারি শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। কবে শেষ হবে তা-ও জানা নেই। সৌম্যা বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, কেউ বলত পারবেন কবে অতিমারি শেষ হবে। দয়া করে বলবেন না, অতিমারি শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ কিছু লোকজন তেমন কাজই করছেন। সমস্ত করোনা-বিধি তুলে দেওয়া বোকামি হবে। অন্তত ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত এই সব বিধি মেনে চলাই উচিত। যে কোনও জায়গায় নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হতে পারে। এতটুকু ভুলচুক হলে আবার আমরা সেই গোড়ার জায়গায় চলে যাব। সাবধানে থাকতে হবে সকলকে।’’
আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশ এক-এক করে সমস্ত করোনা-বিধি তুলে দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে মাস্ক পরার নিয়মও উঠে যাচ্ছে। ব্রিটেনও জানিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তারাও। অর্থাৎ মাস্কহীন হয়ে যাবে। লকডাউনের প্রশ্নও নেই। এ ধরনের পদক্ষেপে মোটেই খুশি নয় হু। ফের সংক্রমণ বাড়ার ভয় পাচ্ছে তারা। আমেরিকায় এখনও দৈনিক সংক্রমণ মাত্রাছাড়া। দু’হাজারের উপরে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এখনও। গত এক মাসে করোনায় ৬০ হাজারের উপরে মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞেরা বারবার বলছেন, যত বেশি সংক্রমণ ঘটবে, তত বেশি নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা। এর মধ্যে করোনা-বিধি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আমেরিকা।
ও দিকে, আমেরিকা যখন চতুর্থ ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে, আফ্রিকা এখনও টিকার প্রশ্নে অন্ধকারে। সৌম্যা জানিয়েছেন, ৮৫ শতাংশ আফ্রিকান এখনও প্রথম ডোজ় পাননি। সেটিও বেশ চিন্তার। একে টিকাহীন, তার উপরে করোনা পরীক্ষাও তেমন হচ্ছে না এই মহাদেশে। এই অবস্থায় নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরির আশঙ্কা প্রবল।
তবে সৌম্যা এ-ও জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচাই শিখতে হবে মানুষকে। তবে তার আগে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও বিজ্ঞান-শিক্ষা, এই দুই বিষয়েই সচেতন হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy