এই ট্রাক নিয়েই হামলা চালানো হয়। ছবি: টুইটার।
তবে কি রূপান্তরের আশঙ্কাই সত্য? প্যারিস, বেলজিয়াম, ইস্তানবুল, বাগদাদ, ঢাকার পরে নিসের হামলা সন্ত্রাস-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই প্রশ্নকে জোরালো করে তুলেছে। তাঁদের আশঙ্কা, ক্রমেই আল কায়েদার মতো শত্রুর ঘরে গিয়ে আক্রমণ চালানোর পথ বেছে নিচ্ছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
কঠোর ইসলামিক অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে খলিফাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা আইএস মূল উদ্দেশ্য ছিল। এই কারণেই আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ছিলেন আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। কিন্তু যতই ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস কোণঠাসা হচ্ছে ততই আল কায়েদার পথে ফিরতে শুরু করেছে আইএস। কিন্তু আল কায়েদা যেমন সেল বা মডিউল তৈরি করে লক্ষ্যে আঘাত হানত, সে পথে যাচ্ছে না আইএস। বরং প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পশ্চিমী যুবক, যুবতীদের জেহাদে দীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আর তারা কখনও দল বেঁধে (প্যারিস, ফ্রান্স), কখনও একলা (সান বার্নার্ডিনো, আমেরিকা) হামলা চালাচ্ছে। এটাকে বলা হচ্ছে, ‘লোন উলফ অ্যাটাক’। কিছু দিন আগেই ভারতে এ ভাবে আইএএস বা আইপিএস অফিসারদের উপরে আক্রমণ চালানোর ডাক দিয়েছে আল কায়েদা। হাতের কাছে যা মিলবে তা দিয়েই আক্রমণ চালাতে বলা হয়েছিল সেই বার্তায়।
যদিও নিসের হামলার দায় এখনও স্বীকার করেনি ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিসের হামলার উদ্যাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সের ‘কৃতকর্ম’-ই যে ফ্রান্সকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে, তা জোর দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে নিস অ্যাটাক হ্যাশ ট্যাগ (#nice attack) তৈরি হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই হ্যাশ ট্যাগ বেশি বেশি করে ব্যবহার করতে দখল নিতে সমমনোভাবাপন্নদের উৎসাহ দিচ্ছে আইএসের ডিজিটাল জেহাদিরা। এর মধ্যেই এই হামলার প্রশংসায় একাধিক পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে আইএস পন্থীরা।
কেউ কেউ বলছেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদে ভর্তি ট্রাকটি থেকে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে চালক নিসের বাসিন্দা। জন্ম তিউনিশিয়ায় হলেও ফ্রান্সের নাগরিক। বয়স ৩১ বছর। আইএস জেহাদিদের অনেকেই তিউনিশিয়ার বাসিন্দা। ফলে এই ঘটনার সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। যে ভাবে ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে একটি ট্রাককে হামলার মাধ্যম হিসেবে যে বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটাও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের কাছে। জেহাদি আদর্শে দীক্ষিত কোন যুবক-যুবতী যে কোনও সময়ে হামলা চালাতে পারে। তাদের কাছে থাকা যে কোনও জিনিসই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আল কায়েদা সাংগঠনিক কাঠামো মেনে বিভিন্ন সেলে ভাগ হয়ে কাজ করে। কিন্তু আইএস অনেক ক্ষেত্রেই প্রথাবহির্ভূত পথে নাশকতা চালায়। আইএসের সংগঠন অনেক ছড়ানো-ছেটানো। তার মধ্যে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেহাদে দীক্ষিত হয়ে যারা আইএস-এর হয়ে হামলা চালানোর ছক কষে, তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। ফলে আগাম হামলা ঠেকানো খুব শক্ত। তার উপরে এ ভাবে একটি হামলা সফল হলে অন্য জেহাদিদের মধ্যে এই ধরনের হামলা চালানোর উৎসাহ বাড়ে। এই ‘লোন উলফ অ্যাটাকই’ আগামী দিনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে অনেকের ধারণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দিন নিশ্চিত ভাবে ইরাক ও সিরিয়াতে আইএস-এর পতন হবে। নিজভূম থেকে আইএসকে মুছে ফেলা সম্ভব হলেও জেহাদিদের মনভূমি থেকে আইএস-কে মুছে ফেলা কার্যত অসম্ভব।
আরও পড়ুন: বিভীষিকায় বদলে গেল উত্সব, ভয়ানক সব ছবি
আরও পড়ুন: ফ্রান্সে ফের জঙ্গি হানা! উত্সবের ভিড়ে ট্রাক ছুটিয়ে ৮৪ জনকে খুন
আরও পড়ুন: ‘আতঙ্কে নিজের বাচ্চাদের ছুড়ে ফেলছিল ছেলেটা’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy