Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আত্মরক্ষায় খুন, তবু ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল ইরানের যুবতীকে

আন্তর্জাতিক আবেদনে কর্ণপাত না করে যৌন নিগ্রহের শিকার ২৬ বছরের এক যুবতীকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাল ইরান সরকার। ২০০৭-এ নিজের দফতরে ডেকে রেহানেহ জাব্বেরি নামে ওই যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ইরানের গোয়েন্দা দফতরের এজেন্ট মোর্তেজা আবদোলালি সরবন্দি। আত্মরক্ষায় রেহানেহ কাগজ কাটার ছুরি দিয়ে মোর্তেজাকে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলে মারা যায় মোর্তেজা। আত্মরক্ষার দাবি উড়িয়ে রেহানেহকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৮
Share: Save:

আন্তর্জাতিক আবেদনে কর্ণপাত না করে যৌন নিগ্রহের শিকার ২৬ বছরের এক যুবতীকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাল ইরান সরকার।

২০০৭-এ নিজের দফতরে ডেকে রেহানেহ জাব্বেরি নামে ওই যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ইরানের গোয়েন্দা দফতরের এজেন্ট মোর্তেজা আবদোলালি সরবন্দি। আত্মরক্ষায় রেহানেহ কাগজ কাটার ছুরি দিয়ে মোর্তেজাকে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলে মারা যায় মোর্তেজা। আত্মরক্ষার দাবি উড়িয়ে রেহানেহকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করে তেহরানের ফৌজদারি আদালত জানায়, ‘ঠান্ডা মাথায়’ মোর্তেজাকে খুন করার ফন্দি এঁটেছিলেন রেহানেহ।

২০০৯ সালে রেহানেহের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরব হয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। আত্মরক্ষা আর খুনের বিভেদ করতে ইরানের আদালতের অক্ষমতা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদও শুরু হয়। তদন্তে অস্বচ্ছতা এবং সাক্ষ্য প্রমাণের প্রতি আদালতের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। ফেসবুক, টুইটারে রেহানেহের সমর্থনে শুরু হয় প্রচার। তা সত্ত্বেও ইরানের আদালতে বার বার খারিজ হয়ে যায় মানবাধিকার সংগঠনগুলির দায়ের করা রেহানেহের প্রাণভিক্ষার আবেদন। জেলে থাকাকালীন রেহানেহের উপর অত্যাচার এবং তাঁকে জোর করে খুনের দায় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ। রেহানেহের পাশে দাঁড়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার শাখা। গত এপ্রিলে ইরানের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার রক্ষা পর্ষদের প্রধান আহমেদ শাহিদ নতুন করে তদন্তের দাবি করেছিলেন।

তবে ২০০৯ থেকে রেহানেহর ফাঁসির তারিখ ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়ায় আশার আলো দেখেছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলি। শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার রেহানেহের মা সোলে পাকরাভনকে ফোন করে শেষ বারের মতো জেলবন্দি মেয়েকে দেখে যাওয়ার আর্জি জানানো হয়। শনিবার ভোরে রেহানেহকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

চুপিসাড়ে রেহানেহকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানোর এই ঘটনায় সুর চড়িয়েছে ব্রিটেনের একটি মানবাধিকার সংগঠন। রেহানেহের গ্রেফতারির পর থেকেই ওই সংস্থা তাঁর পক্ষে সওয়াল করে এসেছে। উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত ওই সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর হাসিবা সাহারাওইর প্রশ্ন, “যে ঘটনার তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে, সেই অভিযুক্তকে কী ভাবে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হল?’’ ইরান সরকারকে তাঁর পরামর্শ, “এ ভাবে মানুষকে ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে বরং দেশের আইন বদলাক সরকার। খেয়াল রাখুক যাতে মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক নিয়মগুলো একটু হলেও রক্ষা করা যায়।” রেহানহর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছে মার্কিন প্রশাসনও।

গত সাত বছর ধরে সরকার আর আদালতের কাছে মেয়ের প্রাণভিক্ষা করে এসেছেন সোলে। মেয়ে যে আর কোনও দিন বাড়ি ফিরবে না, তা এখনও মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “এর চেয়ে বরং গলায় দড়ি পরিয়ে আমাকে মেরে ফেলতো। মেয়েটাকে বাড়ি ফিরতে দিত!” কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, “রেহানেহকে বাড়ি ফিরিয়ে দাও। আমার আর কিচ্ছু চাই না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE