মাশকাফ সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ধীর গতিতে চলছিল জাফর এক্সপ্রেস! দুপুরে ট্রেনের মধ্যে কেউ তখন খাচ্ছিলেন, কেউ আবার গল্পগুজবে ব্যস্ত ছিলেন, আবার কেউ কেউ ঘুমে আচ্ছন্ন। আচমকাই বিকট শব্দ, তার পর মুহুর্মুহু গুলি! মাত্র কয়েক মিনিটের অভিযান, পুরো ট্রেন কব্জা করে নেন বিএলএ-র (বালুচ লিবারেশন আর্মি) বিদ্রোহীরা!
বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ার রেলপথে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মধ্যে দিয়ে জাফর এক্সপ্রেস প্রতি দিনই যাতায়াত করে। ওই ট্রেনে কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যেতে সময় লাগে প্রায় ৩০ ঘণ্টা! মঙ্গলবার সেই ট্রেনটিই দখল করে নেন বিদ্রোহীরা।
জাফর এক্সপ্রেসকে যে এলাকায় কব্জা করা হয়, সেই এলাকা পেরোতে হয় ১৭টি সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে। এর মধ্যে একটি হল মাশকাফ সুড়ঙ্গ। কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে সিবি শহরের কাছে এই সুড়ঙ্গ। এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে বোলান পাস। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্রোহীরা হামলার জন্য এমন এক জায়গা বেছে নিয়েছিলেন যেখানে নিরাপত্তাবাহিনী সহজে পৌঁছোতে পারবে না। তা ছাড়াও ওই এলাকা বিদ্রোহীদের হাতের তালুর মতো চেনা। ফলে অভিযানে সেনা নামলেও সহজে তাঁরা পালিয়ে নিজেদের বাঁচাতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার পেহরোকুনরি স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটা সবেমাত্র মাশকাফ সুড়ঙ্গে ঢুকেছিল। আচমকাই জাফর এক্সপ্রেসের সামনে রেলপথে বিস্ফোরণ। তার পর একটি বুলেট এসে লাগে চালকের বুকে। সুড়ঙ্গের মধ্যেই থেমে যায় ট্রেনটি। কেবিনের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন চালক। ট্রেনে তখন ৪০০ জনের বেশি যাত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পাক সেনাবাহিনীর কর্মীরাও।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে গুলির লড়াই চলছে নিরাপত্তাবাহিনীর। আকাশপথে সেনা নামানো হয়েছে। রাতেই বিদ্রোহীদের হাতে অপহৃত ট্রেনের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পাক নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পাক সেনার ‘স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্রুপ’-এর কমান্ডোরা। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও সব পণবন্দিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অপহৃত জাফর এক্সপ্রেস থেকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে অন্তত ১৫৫ জন যাত্রীকে। পাক সেনা সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি, এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন বালুচ বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
- সরকারি ভাবে অভিযানের ইতি টানা হয়েছে বুধবার রাতে। বালোচিস্তানের কাচ্চি বোলানে জাফর এক্সপ্রেস কব্জার ঘটনায় উদ্ধারপ্রাপ্ত এবং হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ কাটেনি বৃহস্পতিবার দুপুরেও। পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তরার যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) তা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
- মঙ্গলবার বালুচিস্তানের কাচ্চি জেলার বোলান এলাকায় একটি সুড়ঙ্গে ঢোকার মুখে যখন জাফর এক্সপ্রেসটিকে অপহরণ করা হয়, তখন ওই ট্রেনে ছিলেন অন্তত ৪৫০ জন। বুধবার পর্যন্ত ১৫০ জন যাত্রীকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ বিদ্রোহী। এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। যাত্রীদের পণবন্দি করে তারা পাকিস্তানের জেল থেকে বন্দি বিনিময়ের দাবি জানিয়েছে। বুধবার রাতে পাকিস্তান সেনা জানায়, অভিযান শেষ হয়েছে। বিদ্রোহীরা সকলে নিহত।
-
‘আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করলে পরবর্তী নিশানা হবে ইসলামাবাদ’! পাক সেনাকে হুমকি বালোচ বিদ্রোহীদের
-
দিনভর পাক সেনা অভিযান, বালোচ বিদ্রোহীমুক্ত জ়াফর এক্সপ্রেস, তবু ধোঁয়াশা কাটছে না
-
ট্রেন অপহরণে আফগানিস্তানের কোনও যোগ নেই, পাক অভিযোগ উড়িয়ে হুঁশিয়ারি তালিবানের
-
পাক সেনা ক’জন পণবন্দিকে মুক্ত করল? হতাহতের সংখ্যাই বা কী? অভিযান শেষের পরেও ধন্দ বালোচিস্তানে
-
‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ কারা? ট্রেন হাইজ্যাকের নেপথ্যে, বালোচের বিদ্রোহীরা কী চায়?