সংসদে বা বিধানসভার অন্দরে ‘কক্ষ সমন্বয়’ (ফ্লোর কোঅর্ডিনেশন) পরিচিত শব্দ। নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে বিভিন্ন দল বা পক্ষ এক হয়ে সরব হওয়ার যে কৌশল, তাকেই ‘কক্ষ সমন্বয়’ বলা হয়। কিন্তু বিজেপিতে এ বার শুরু হল নেতৃত্ব সমন্বয় (কোর কোঅর্ডিনেশন)। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে যাওয়ার আগে ‘সর্বোচ্চ নেতাদের মধ্যে সমন্বয়’। শুধু কমিশনে নয়, বাংলার বিধানসভা এবং ভারতের লোকসভাতেও যাতে একই সুরে তৃণমূলকে বিজেপি জবাব দিতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে এই নেতৃত্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে। মঙ্গলবার সকালে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ ফোনে কথা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। ফোনালাপে ‘দ্বিমুখী’ কৌশল নির্ধারিত হয়েছে বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
একই দিনে দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সামনে হাজির হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১১ মার্চ যে বিজেপির প্রতিনিধিদল নির্বাচন সদনে যাবে, তা গত শুক্রবারই ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার দিন দুয়েক পরে তৃণমূলও ঘোষণা করে যে, তারা একই দিনে নির্বাচন সদনে যাচ্ছে। বাংলার ভোটার তালিকায় বিজেপি ‘ভুয়ো ভোটার’ এবং ‘ভিন্রাজ্যের ভোটার’ ঢুকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বরের সঙ্গে অন্য কয়েকটি রাজ্যের বেশ কিছু ভোটারের পরিচয়পত্রের নম্বর মিলে যাচ্ছে বলেও তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন। এই নম্বর মিলে যাওয়ার অভিযোগের সত্যতা নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করে নেয়। সব অভিযোগ সমন্বিত করে তৃণমূল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে ইতিমধ্যেই চিঠি জমা করেছে। এ বার ‘তথ্যপ্রমাণ’ সহযোগে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দরবারেও যাচ্ছেন তৃণমূলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তৃণমূলের এই অভিযোগের মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে? পাল্টা কোন কোন অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলা হবে? এই নিয়েই মঙ্গলবার সকালে ফোনে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হল রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতার।
আরও পড়ুন:
প্রথম কৌশল, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সামনে ‘তথ্যপ্রমাণ’ পেশ করে তৃণমূলের তোলা অভিযোগ খণ্ডন করা। এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলা। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় তৃণমূল বাংলাদেশি নাগরিকদের এবং রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে বিজেপি অভিযোগ জানাবে। বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা-সহ ‘বিপুল সংখ্যক’ ভুয়ো ভোটারের অন্তর্ভুক্তি এবং প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া তৃণমূলের অন্যতম ভোট-কৌশল বলে কমিশনকে বিজেপি জানাবে।
দ্বিতীয় কৌশল, সংসদেও একই ইস্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হওয়া। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই তৃণমূল এপিক নম্বর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই কক্ষেই সরব হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগকে সমর্থন করে কংগ্রেসও সরব হয়েছে। ফলে এপিক নম্বর সংক্রান্ত বিতর্কে প্রথম দিনেই সরগরম হয়েছে সংসদ। কিন্তু তৃণমূলের তোলা এই অভিযোগকে ‘গুরুতর গরমিল’ হিসেবে গোটা দেশের সামনে প্রতিষ্ঠিত হতে দিতে চায় না বিজেপি। সুকান্ত এবং শুভেন্দুর মধ্যে তা নিয়েও ফোনে আলোচনা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। সংসদে সোমবার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তৃণমূলের অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ও রকম বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়, সম্মিলিত ভাবে বঙ্গের বিজেপি সাংসদেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ তুলে লোকসভায় ও রাজ্যসভায় সরব হবেন বলে শুভেন্দু ও সুকান্তর আলোচনায় স্থির হয়েছে। শুভেন্দুরা যে অভিযোগে বিধানসভায় সরব হবেন, সেই অভিযোগেই সংসদে তৃণমূলকে চাপে ফেলার চেষ্টা করবে বিজেপি। নেতৃত্ব সমন্বয়ে এই সিদ্ধান্তই হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।