মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ঢুকে হামলার কিছু ক্ষণ আগে কাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ৭৩ পাতার একটি ইস্তাহার পোস্ট করেছিল অস্ট্রেলীয় জঙ্গি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। মুসলিমদের উপর তার কিসের এত রাগ, তার স্পষ্ট বয়ান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, তিনি এর একটি পাতাও পড়েননি। ‘ভয়ঙ্কর’ বললেন ওই হামলাকে। নিউজ়িল্যান্ডের পাশে থাকার বার্তাও দিলেন। কিন্তু তার পরেই যা বলেলেন, তাতে যেন হুবহু সেই ইস্তাহারের সুর।
তখনও আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত থেকে জরুরি অবস্থা তোলার প্রস্তাবে ভিটো দেননি ট্রাম্প। তার খানিক আগেই কাল ওভাল অফিস থেকে নিউজ়িল্যান্ড হামলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঢুকে পড়লেন নিজের ‘প্রিয়’ ওই অভিবাসী প্রসঙ্গেই। বললেন, ‘‘শুনতে খারাপ লাগলেও ওরা হানাদারই। সব ধরনের অপরাধী ঢুকছে দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে। ওদের আটকাতেই হবে। এটা আমাদের দেশ, রক্ষা করতে হবে আমাদেরই।’’
মসজিদে ঢুকে হত্যালীলা চালানোর আগে ইস্তাহার ঠিক এই কথা বলেছিল ব্রেন্টনও। সেই এক ‘আমরা-ওরা’-র সমীকরণ। অশ্বেতাঙ্গ, বিশেষত মুসলিম আর অভিবাসীদের প্রতি সেই এক পুষে রাখা রাগ। অবৈধ অভিবাসীদের ট্রাম্প এক বার বলেছিলেন, ‘জন্তু’। ‘অভিবাসীদের আড়ালে দুষ্কৃতী ঢুকবে’ বলে সাতটি মুসলিম দেশকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। ওরা পাথর ছুড়লে, পুলিশকে গুলি করে মারার মৌখিক নির্দেশও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর নিজেকে ট্রাম্প-ভক্ত দাবি করা অস্ট্রেলীয় বন্দুকবাজ লিখেছিলেন, ‘‘এটা আমাদের মাটি, ওরা কোনও ভাবেই কব্জা করতে পারবে না। এই সত্যিটা বুঝিয়ে দিতেই হামলা। যত দিন শ্বেতাঙ্গরা আছে, কিছুতেই মাটি দখল করতে দেব না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ক্রাইস্টচার্চের আততায়ীর মতো সেই ‘বিদেশি-আতঙ্ক’ কাল ফের উঠে এল মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাতেও। নিউজ়িল্যান্ডের মাটিতে অভাবনীয় এই শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে বিশ্বের একটা বড় অংশ। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন মানতেই চাইলেন না। বললেন, ‘‘মনে হয় না শ্বেত সন্ত্রাস তেমন বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে। নিউজ়িল্যান্ডে একটা ছোট দলের কয়েকটা লোক এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডটা ঘটিয়েছে। তার বেশি কিছু হয়ছে বলে তো জানি না।’’
ট্রাম্প হাল্কা করতে চাইছেন, কিন্তু তাঁর দেশের কূটনীতিকেরাই দেখিয়ে দিচ্ছেন— ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে কী ভাবে মার্কিন মুলুকেই বেড়ে গিয়েছে শ্বেতাঙ্গদের দাপট। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৭-য় ভার্জিনিয়ায় শ্বেতাঙ্গ তথা নব্য নাৎসিদের মিছিল থেকে ছড়িয়ে পড়া হিংসার কথা। সে বার দু’পক্ষকেই দুষে ট্রাম্প কার্যত বর্ণবৈষম্যকেই উস্কানি দিয়েছিলেন বলে দাবি অনেকের। তার আগে ও পরে একাধিক বার মুসলিম ও অভিবাসীদের নিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য তো আছেই। মার্কিন হেফাজতে আটক শিশুদের দেখতে ‘পরোয়া করি না’ লেখা জ্যাকেট পরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও।
তবে এই ‘বিদেশি-আতঙ্ক’ হালের আমদানি নয়। কূটনীতিকেরা বলছেন, ঔপনিবেশিকতার পতনের পরেই ফ্রান্স, আমেরিকা-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ জুড়ে এটা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। ওই বন্দুকবাজ অস্ট্রেলীয়, কিন্তু সে নিউজ়িল্যান্ডেও ‘হানাদার’-দের সহ্য করতে পারে না। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পরমার্শদাতা এবং তিন বার হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নামা প্যাচ বুকানন বছরের পর বছর ধরে লিখে গিয়েছেন ‘তৃতীয় বিশ্ব কী ভাবে দখল করে নিচ্ছে আমেরিকাকে।’
এই ‘হানাদার’দের কথা বলতে গিয়েই ১৯৭৩-এ ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট কনস্পিরেসি’ তত্ত্বের কথা বলেছিলেন ফরাসি ঔপন্যাসিক জঁ রসপেল। কাল নিউজ়িল্যান্ডে হামলার আগে ট্রাম্প-ভক্তের পোস্ট করা ৭৩ পাতার সেই ইস্তাহারেরও এক শিরোনাম— ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy