Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সবাই বন্দি ক্যাপসুলে, কেমন আছে বাচ্চারা?

এ দেশে যবে থেকে আছি, নিশ্চিত ভাবে একটা কথা জানি— আমেরিকায় মানুষের প্রাণের দাম খুব বেশি। এক জন অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় পড়া মানুষকে বাঁচাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যান এখানকার ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

সময়ের একটা ক্যাপসুলের মধ্যে বসে আছি আমরা। দৈত্যাকার, পৃথিবী-জোড়া এক ক্যাপসুল, সবাই নিজস্ব কুঠুরিতে, কিন্তু সবাই মিলে আটকে ওই মহাকায় ক্যাপসুলের মোড়কে। কী নেই সেই মোড়কে! পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাধ্য মতো নিজেদের পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা, মারণরোগের আশঙ্কা ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা, সরকার ও প্রশাসনকে একই সঙ্গে ভরসা আর অবিশ্বাস করা, পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে আসা খবর জানতে চাওয়া এবং জানতে না-চাওয়া। ওই ক্যাপসুলে আটকে রয়েছি সবাই, এর শেষ কোথায় দেখতে পাচ্ছি না।

এ দেশে যবে থেকে আছি, নিশ্চিত ভাবে একটা কথা জানি— আমেরিকায় মানুষের প্রাণের দাম খুব বেশি। এক জন অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় পড়া মানুষকে বাঁচাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যান এখানকার ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকরা। সেই দেশে কোভিড-আক্রান্ত হয়ে আজ পর্যন্ত ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারালেন। সম্পূর্ণ অসাড় মন নিয়ে আমরা প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা গুনছি। কিন্তু এ তো শুধু সংখ্যা নয়। প্রতিটি সংখ্যার পিছনে আছে এক জন মানুষ এবং একটি পরিবার। যাঁরা কোনও ভাবে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পেরেছেন প্রিয়জনকে, তার পরে প্রিয়জন যখন চলে গিয়েছেন, কেউ বিদায়ও জানাতে পারেননি। নিজেরাও হয়তো বসে আছেন কোয়রান্টিনে। একটা নয়, দু’টো নয় এখন এমন হাজার হাজার পরিবার রয়েছে এ দেশে।

ম্যাসাচুসেটসের অ্যান্ডোভার নামে একটা ছোট শহরে থাকি। আমাদের সব থেকে কাছের বড় শহর বস্টন। একটি মিডল স্কুলে ‘স্পেশাল এডুকেশনে’র কাজ করি। নানাবিধ খবর ও পরিসংখ্যানে চোখ বোলাতে বোলাতে মাঝেমধ্যেই মনে হয় আমার ছাত্রছাত্রীদের কথা। বছর তিনেক আগে আমার পাশের শহরের একটি হাইস্কুলে কাজ করতাম। সেই শহরের বেশির ভাগ বাসিন্দাই আদতে মধ্য আমেরিকার, যাদের এখানে ‘ল্যাটিনো’ বলে। খুব সাধারণ কাজ করা মানুষ এঁরা। এঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরাও ছোটখাটো দোকানে কাজ করে। দোকানে গেলেই দেখা হত ওদের সঙ্গে। ওদের রোজগারের টাকাটা নিজের ও পরিবারের খরচ চালানোর কাজে লাগে, তাই কাজ না-করেও উপায় নেই। এখনও এই পরিস্থিতিতেও হয় তো কাজ করে যাচ্ছে ওরা। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রোজ বেরোতে নিশ্চয় খুব ভয় করছে ওদের!

আরও পড়ুন: সংক্রমণ বাড়ুক, চুল কাটা এখন যে খুব জরুরি!

বস্টনের কাছের আর একটি শহরে শুনছি হু-হু করে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রচুর। সেখানকার একটি স্কুলের পড়ুয়াদের চিনতাম। সেখানে বেশির ভাগই আবার ‘সিঙ্গল মাদারের’ সন্তান। তাঁদের অনেকেই নার্স বা হেলথকেয়ারে কাজ করতেন। ভাবছি সেই সব বাচ্চার কথা, যখন তাদের একমাত্র অভিভাবক প্রতিদিন কাজে বেরোচ্ছেন আর কাজ করছেন সংক্রমণের মধ্যেই। প্রত্যেক দিন কী ভয়ানক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাগুলো! এই সব ভয় পাওয়া বাচ্চার হাত ধরতে পারব তো আমরা?

এখন স্কুল পুরোপুরি অনলাইনে চলছে। সাধারণ স্কুলের থেকে অনলাইন স্কুলের সময় কম, তাই সুযোগ পাচ্ছি অনলাইনেই নানা বিশেষজ্ঞের কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করার। এই রকম একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে একটি বিশেষ সংস্থার কথা জানতে পারলাম, যারা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাজ করে। এই সংস্থাটি ‘অনুপস্থিত’ পড়ুয়াদের বুঝতে একটি মডেল ব্যবহার করে। আজকের পৃথিবীতে তো কোনও পড়ুয়াই স্কুলে আসতে পারছে না। সব ছাত্রছাত্রীই স্কুলে ‘অনুপস্থিত’। তা হলে এই মডেলটি ব্যবহার করে কি আমরা বাড়িবন্দি সেই সব পড়ুয়ার অবস্থা বুঝতে পারব? (চলবে)

(লেখক স্পেশ্যাল এডুকেটর)

আরও পড়ুন: চিনের ট্রায়াল ‘ব্যর্থ’, বিতর্ক

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy