গোয়াদরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং-এর কাজ প্রায় শেষ। এই বিমানবন্দরও চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরেরই অঙ্গ। ছবি: রয়টার্স।
ভারতের আপত্তি গ্রাহ্য হয়নি রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করছে চিন-পাকিস্তান, তাতে আপত্তি জানায়নি রাষ্ট্রপুঞ্জ। ‘সিল্ক রোড’ প্রকল্পের আওতায় চিনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের এবং পরবর্তী পর্যায়ে গোটা বিশ্বের যোগাযোগ আরও মসৃণ করতে চান প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। সেই প্রকল্পেরই পোশাকি নাম ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর)। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ‘স্বার্থে’ প্রেসিডেন্ট চিনফিং-এর সাধের প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে। আর অনুমোদন পেয়েই উল্লসিত চিন জানিয়ে দিল, আন্তর্জাতিক মহলকে সঙ্গে নিয়েই চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের উন্নয়নের কাজ আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
চিনের পশ্চিম প্রান্তের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে শুরু হয়েছে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর। শেষ হয়েছে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের গোয়াদর বন্দরে। কিন্তু সড়ক এবং রেল পথে চিন থেকে পাকিস্তানে বা পাকিস্তান থেকে চিনে ঢোকার এই করিডর গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই গিলগিট-বাল্টিস্তানকে ভারত নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই মনে করে। চিন-পাকিস্তান যৌথ ভাবে সেই গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়েই অর্থনৈতিক করিডর বানানোর সিদ্ধান্ত নিলে ভারতের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা হয়, রাষ্ট্রপুঞ্জে এমনই জানিয়েছে নয়াদিল্লি। নিরাপত্তা পরিষদ ভারতের সে আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে এবং বৃহত্তর ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরকেও বৈধতা দিয়ে দিয়েছে। এর পরেই বেজিং-এ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং সোমবার জানিয়েছেন, গোটা বিশ্ব চিনের এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে। ভারতের উচিত এ বিষয়ে আরও বাস্তবসম্মত অবস্থান নেওয়া এবং এই প্রকল্পের শরিক হওয়া।
‘‘নিরাপত্তা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রেক্ষিতে চিন রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আরও সক্রিয় ভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ সোমবার এমনই মন্তব্য করেছে চিনা বিদেশ মন্ত্রক। মানবজাতির জন্য এক সহযোগিতাপূর্ণ ভবিষ্যত তৈরির লক্ষ্যে এবং এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যেই চিন এই বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাইছে বলে চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে।
গোয়াদর বন্দর। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের এই বন্দরই হল চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছবি: রয়টার্স।
ভারতকে আগেও চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের শরিক হতে আহ্বান জানিয়েছে ইসলামাবাদ ও বেজিং। কিন্তু নিজের সার্বভৌমত্বের যুক্তি তুলে ধরে ভারত এই প্রকল্পের বিরোধিতাই করেছে প্রথম থেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এ বার সেই প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়ায় চিনের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেল বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদ কিন্তু শুধু ওই বিতর্কিত করিডরের প্রেক্ষিতে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বৃহত্তর ওবিওআর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত সেই সিদ্ধান্তে আফগানিস্তান ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় করার কথা বলা হয়েছে। তার অঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তান-তুর্কমেনিস্তান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে জোর দেওয়া হয়েছে। ইরানের ছাবাহারে ভারত-ইরান-আফগানিস্তানের যৌথ উদ্যোগে যে বন্দর তৈরি হচ্ছে, সেই প্রকল্পের রূপায়ণে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চিনের প্রস্তাবিত ওবিওআর বা সিল্ক রোড উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো সীমান্তে কেমন হবে দেওয়াল, বাতলে দিচ্ছেন খোদ ট্রাম্প
চিনের ওবিওআর উদ্যোগের আওতায় ভারত-চিন-মায়ানমার-বাংলাদেশ রেল ও সড়ক পথ গড়ে তোলার প্রস্তাবও রয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশ নিতে ভারতের আপত্তি নেই। কিন্তু চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে ভারতের আপত্তি থাকছেই। নিরাপত্তা পরিষদ যতই সিলমোহর দিক, গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাওয়া করিডরের বিরোধিতায় ভারত যে ভাবে সরব, তা নিয়ে চিনের অস্বস্তি যে থাকছেই, সে কথা চিনা বিদেশ মন্ত্রকের বার্তা থেকেই স্পষ্ট। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারতের উদ্বেগ সত্ত্বেও চিনের ওবিওআর উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে সমর্থন পেয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy