ফুটবল আর শিল্পকলার শহর বার্সেলোনায় রাত পোহালেই ভোট। রবিবার অবশ্য গোটা স্পেন জুড়েই সাধারণ নির্বাচন। তবু ভোট নিয়ে বার্সেলোনার আবেগ খানিকটা আলাদা।
ভূমধ্যসাগর-ঘেঁষা স্পেনের বিদ্রোহী ক্যাটালোনিয়া ভূখণ্ডের কেন্দ্রে এই শহরের অবস্থান। সেই ক্যাটালোনিয়া, যে স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক দশক ধরে লড়াই করছে। ভাবলে অবাক লাগে, যে স্পেনের শাসন থেকে মুক্তি চেয়ে লড়াই করছে ক্যাটালোনিয়া, রবিবার সেই দেশের সাধারণ নির্বাচনে হইহই করে অংশ নিচ্ছে তারা! স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, ভোট বয়কট করার চেয়ে, পছন্দের দলকে ভোটে জিতিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই ওঁরা বেশি আগ্রহী।
মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতে ক্যাটালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে ৭১-এর বাংলাদেশের। এ অঞ্চলের প্রচলিত ভাষা ক্যাটালান। শুনেছি, স্বৈরাচারী ফ্রাঙ্কো শাসকদের আমলে ক্যাটালোনিয়ার উপরে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারি ভাষা স্প্যানিশ। বাড়িতে ক্যাটালান ভাষায় লেখা কোনও বই থাকলে গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য করা হত। সে সবের খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাত পুলিশ। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আংশিক স্বায়ত্তশাসিত ক্যাটালোনিয়ার স্কুলে স্কুলে এখন এই ভাষাতেই পড়াশোনা চলে। ভাষা নিয়ে এঁরা এতটাই স্পর্শকাতর যে স্প্যানিশ ভাষায় কিছু প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ক্যাটালানে। প্রথম প্রথম তা নিয়ে কম বিড়ম্বনায় পড়িনি।
বার্সেলোনায় এ বার ক্যাটালান ভাষাতেই ভোটের ইস্তাহার আর প্রচার চলছে পুরোদমে। রাস্তা জুড়ে রঙিন গ্রাফিতি। স্প্রে পেন্টিংয়ে পছন্দসই দলের প্রতীক বা নেতার মুখ আঁকা। ভোটের আগে প্রচার চলেছে ইন্টারনেট, ফোন মেসেজে। এমনকি ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি ফোন আসাও বিরল নয় এখানে। ভোটের আগে পতাকা উড়ানো মিছিল দেখেছি রাস্তায়। তবে সবই শান্তিপূর্ণ। বেকারত্ব, পেনশন ব্যবস্থা, কর সংস্কারের মতো বিষয়গুলিই ভোটের প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে।
গত চার বছরে এই নিয়ে স্পেনে তৃতীয় বার সাধারণ নির্বাচন। ভোট এক দিনেই। এই মুহূর্তে ক্যাটালোনিয়া আন্দোলন, অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস, শরণার্থী সঙ্কট, আর্থিক দুর্নীতির মতো সমস্যায় ধুঁকছে স্পেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থা এখন এতটাই চরমে যে ২০১৯ সালে বাজেট পেশ করতে পারেনি সরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাই ফের নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেস। এ বারের ভোটে বামপন্থী শাসক দল পিএসওই ও দক্ষিণপন্থী অন্যতম বিরোধী পপুলার পার্টি (পিপি) ছাড়াও ছোট-বড় মিলিয়ে খান পাঁচেক দল লড়ছে।
ভোটপূর্ব সমীক্ষায় একটা বিষয় স্পষ্ট, এ বার যে দলই জিতুক না কেন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার আশা কম। বরং ছোট-ছোট আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সরকার গড়ার কথা ভাবছে বড় দলগুলি।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ফল ঘোষণা। তবে ফল বেরোলেই যে সব সমস্যা মিটে যাবে সেই আশা করছে না মানুষ। তবু হাল ছেড়ে নয়, ভোট দিয়েই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে ক্যাটালোনিয়া।
লেখিকা বার্সেলোনা গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ম্যাথমেটিকসের গবেষক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy