ছবি: এএফপি।
স্কুল-কলেজে তালা। এমনকী অলিগলিতেও ঝাঁপ বন্ধ দোকানের। ঘড়িতে সকাল সাড়ে ১০টা, তবু কী আশ্চর্য থমথমে সব হাসপাতাল! এ দিকে যান চলাচল পুরোপুরি আটকে দিয়ে দিনের শুরুতেই রাজধানী বার্সেলোনার রাস্তায় নেমে পড়েছেন হাজার পনেরো ধর্মঘটী। বেশির ভাগেরই হাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লাল-হলুদ পতাকা, আর গলায় স্লোগান— ‘‘এই সব রাস্তা বরাবর আমাদেরই থাকবে।’’
গত রবিবার গণভোটের দিন পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের জেরে আজ এমনই ছবি ধরা পড়ল গোটা ক্যাটালনিয়া জুড়ে। আবারও দাবি উঠল স্পেন থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের। কার্যত অচল আজকের বার্সেলোনায় হাজির থেকেও হাত গুটিয়ে রইল স্পেনের পুলিশ।
ক্যাটালনে যে এমন একটা অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত কালই। বার্সেলোনায় আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনও সরকারি বাস চলেনি। লা লিগার ডাকসাইটে ফুটবল ক্লাবও এ দিন অংশ নিয়েছিল ধর্মঘটে। ব্যতিক্রম শুধু ক্যাটালনের দুই প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠন। গণভোটে সায় নেই, তবে ভোট দিতে আসা জনতার উপর মারমুখী পুলিশের সমালোচনা করে তারা জানিয়েছে, অবিলম্বে বার্সেলোনার সঙ্গে বৈঠকে বসা উচিত মাদ্রিদের।
এমনটা হলেও কি সমাধানসূত্র বেরোবে? আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। ভোটের দিন পুলিশি তাণ্ডবে আহতের সংখ্যা প্রায় ৯০০ ছুঁতেই স্পেনকে একহাত নেয় রাষ্ট্রপুঞ্জ। ভবিষ্যতে এমন পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে মাদ্রিদকে সাবধান করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ক্যাটালনের স্পেন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দাবি নিয়ে বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিশেষ বিতর্কসভার আয়োজন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে মাদ্রির-বার্সেলোনার তরজা কিন্তু চলছেই। স্বাধীনতার দাবিতে ক্যাটালনের গণভোটকে গোড়া থেকেই ‘গণতন্ত্রের প্রতি উপহাস’ বলে আসছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। ক্যাটালন আবার পুলিশি হামলাকেই ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশটির প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমেঁর দাবি, স্পেনের পুলিশ ভোট ভন্ডুল করতে চাইলেও ৯০ শতাংশ মানুষ স্পেন থেকে আলাদা হতেই চাইছে। কিন্তু ৮ লক্ষের মতো মানুষের তো ভোটই পড়েনি। এ ক্ষেত্রে ক্যাটালন যেমন মাদ্রিদের পুলিশকে দুষছে, পাল্টা জবাবে স্পেন জানিয়েছে— স্পেন ছাড়তে নারাজ অনেকে সে দিন বাড়ি থেকেই বেরোননি। জল্পনা ছড়াচ্ছে, বিবাদের জেরে ক্যাটালনের হাত থেকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকারও কেড়ে নিতে পারে স্পেন।
কিন্তু আজ যারা রাস্তায় নামলেন, তাঁরাও কি সবাই স্পেন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে? স্পেনীয় কূটনীতিকদের একাংশ কিন্তু তা বলছেন না। তাঁদের দাবি, আজকের সর্বাত্মক ধর্মঘট যতটা না স্বাধীনতার দাবিতে, তার চেয়ে ঢের বেশি পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে। স্পেন ছাড়ার প্রশ্নে ক্যাটালন এখনও দ্বিধাবিভক্তই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy