উৎসব: স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে উচ্ছ্বাস। শুক্রবার বার্সেলোনায়। ছবি: রয়টার্স।
অবশেষে মুক্তির ডাক! স্পেনের প্রশাসনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই আজ স্বাধীনতা ঘোষণা করল কাতালুনিয়ার প্রাদেশিক পার্লেমেন্ট। গণভোটের ঠিক ২৭ দিনের মাথায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো— মাদ্রিদ কি আদৌ এই ঘোষণা মানবে? স্বাধীনতার দাবিতে ১ অক্টোবরের গণভোট অবৈধ ঘোষণা করেছিল স্পেনের আদালত। আজ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় জানান, তিনি কাতালুনিয়া পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আঞ্চলিক নির্বাচন ঘোষণা করবেন। ‘‘এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে এই পদক্ষেপ খুব জরুরি’’, বলেন রাজয়।
প্রধানমন্ত্রীর এই কথা থেকে স্পষ্ট যে, কাতালুনিয়া স্বায়ত্তশাসন কে়ড়ে নিতেই তিনি এত আগ্রাসী পদক্ষেপ করছেন। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহেই সেনেটে ভোট করাতে চলেছেন রাজয়। সেনেটে তাঁর দল পপুলার পার্টিরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে আজ বিকেলে বৈঠকে বসেছিলেন সেনেটররা। প্রাথমিক ভাবে কাতালুনিয়ার উপর খড়্গহস্ত হওয়ার ব্যাপারে রাজয়কে ছা়ড়পত্রও দিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: টিলারসন কি তবে মধ্যস্থতা চাইছেন
বার্সেলোনা কিন্তু মেতে উঠেছে শ্যাম্পেনের বন্যায়। রাস্তায় নেমেছেন স্বাধীনতাকামীরা। স্লোগান উঠেছে, ‘‘এই পথঘাট আমাদের। আমাদেরই থাকবে।’’ দিনের শুরুতে অবশ্য ছবিটা ছিল একটু অন্য রকম। স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব নিয়ে গোপনেই ভোট শুরু হয়েছিল কাতালুনিয়া প্রাদেশিক পার্লামেন্টে। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টে। ফল বেরোতে দেখা গেল, স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে ভোট পড়েছে ৭০টি। আর বিপক্ষে ১০টি।
কিন্তু ঘোষণায় এতখানি বিলম্ব কেন? ব্যালট ছিনিয়ে ১ অক্টোবরের গণভোট কার্যত ভেস্তে দিয়েছিল রাজয়ের প্রশাসন। সে দিন অর্ধেকেরও বেশি ভোটই পড়েনি। তবু কাতালান প্রেসি়ডেন্ট কার্ল পুইদমঁ দাবি করে আসছিলেন, ৯০ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষেই। সেই জোরে এক বার ‘মুক্তি’ ঘোষণা করতে গিয়েও পিছিয়ে আসেন তিনি। আসলে তিনি দেখে নিতে চেয়েছিলেন, স্পেন আদৌ ব্যাপারটা আলোচনায় মেটাতে চায় কি না! পুঁইদম জানিয়েছিলেন, তাঁরা স্পেনকে নিজেদের দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা বোঝাতে চাইছেন। শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদ চাইছেন স্পেনের সঙ্গে। আর তা সুসম্পর্ক বজায় রেখেই। কিন্তু স্পেন অনড় বুঝেই শেষমেশ স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিতে প্রস্তাব জমা পড়ে প্রাদেশিক পার্লামেন্টে।
আজ ভোট শেষে সেই ঘোষণাও হয়ে গেল। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও কাতালুনিয়ার এই ‘প্রতীকী জেহাদ’ স্বীকৃত হবে না বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। রাজয় বলেই দিয়েছেন, ‘‘রাতারাতি এই ঘোষণায় গণতন্ত্র, দেশের আইন-কানুন, নাগরিক স্বার্থ— সবই ভেঙেছে কাতালুনিয়া। স্বাধীনতার দাবিতে পুইদমঁ এর আগেও একাধিক বার আইন ভেঙেছেন।’’ তাই আগে যেমনটা বলেছিলেন, প্রথমে পুইদমঁকে সরিয়ে সংবিধানের ১৫৫ ধারা চাপিয়ে কাতালুনিয়ায় স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতেই মরিয়া তাঁর প্রশাসন। ব্রিটেনের মতো বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও জানিয়েছে, তারা রাজয়েরই পাশে।
এ দিনের ভোটে আবার সায় ছিল না কাতালুনিয়ার তিন প্রধান বিরোধী দলেরও। গোড়াতেই ওয়াক-আউট করেন তাদের নেতারা। ভোটের ফল প্রকাশের পরেও তাঁরা এক প্রস্ত সুর চড়াতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মুহূর্তে তা চাপা প়ড়ে যায় বিজয়োল্লাসে। গানে আর স্লোগানে পার্লামেন্ট চত্বর থেকেই শুরু হয়ে যায় মিছিল।
‘কিন্তু’ একটা থেকেই যাচ্ছে। কাতালুনিয়াকে ভাবাচ্ছে স্পেনের অনড় মনোভাব। বার্সেলোনার মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই বছর পঞ্চাশের সঙ্গীতশিল্পী জাউমে মলিনে বললেন, ‘‘চাপা একটা উদ্বেগ কিছুতেই কাটাতে পারছি না।’’
আশঙ্কা রইল লা লিগার ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy