Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

জেলে আট মন্ত্রী, ক্ষোভে দু’ভাগ ক্যাটালোনিয়াই

মাদ্রিদের এই পদক্ষেপে ভাগ হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষও। কেউ বলছেন, ‘‘বেশ হয়েছে, স্বাধীনতার নামে দেশভাগ করা!’’ কারও আবার বক্তব্য, ‘‘গ্রেফতার করে আরও উস্কে দেওয়া হল বিষয়টাকে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই তো বিক্ষোভ চলছিল!’’

স্লোগান: রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য সরব। ক্যাটালোনিয়ার পার্লামেন্টের বাইরে। ছবি: এএফপি।

স্লোগান: রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য সরব। ক্যাটালোনিয়ার পার্লামেন্টের বাইরে। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
বার্সেলোনা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

দেশদ্রোহের অপরাধে যে জেল হতে পারে, সে গুঞ্জন উঠেছিল বহু আগেই। এক দিকে যখন ২১ ডিসেম্বর গণভোটে দাঁড়াতে তাঁকে আহ্বান জানানো হয়েছিল, উল্টো দিকে শোনা যাচ্ছিল ৩০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে ক্যাটালোনিয়ার পদচ্যুত প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমেঁর।

সেটাই হল। প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট অরিয়ল জঁকারস-সহ ক্যাটালোনিয়ার আট মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুইদমঁ আপাতত বেলজিয়ামে। গ্রেফতারির কথা শোনা যেতেই তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বেলজিয়াম। যদিও পুইদমঁ তার বেলজিয়াম-বাসকে ‘আশ্রয়’ বলে মানতে নারাজ। মাদ্রিদের আইনজীবীরা তাঁকে ইউরোপের বিশেষ আইনে জেলে পুরতে উদ্যোগী হয়েছেন। ইউরোপীয় আইনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথা ভাবা হচ্ছে বরখাস্ত হওয়া আরও পাঁচ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও।

মাদ্রিদের এই পদক্ষেপে ভাগ হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষও। কেউ বলছেন, ‘‘বেশ হয়েছে, স্বাধীনতার নামে দেশভাগ করা!’’ কারও আবার বক্তব্য, ‘‘গ্রেফতার করে আরও উস্কে দেওয়া হল বিষয়টাকে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই তো বিক্ষোভ চলছিল!’’

বছর ৬৬-র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ডোলোরেসের যেমন মনে হয়, আরও খারাপ হল এটা। বললেন, ‘‘আমি কোনও দিনই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে ছিলাম না। ভোটও দিইনি। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলতে পারি, ওরা বাড়াবাড়ি কিছু করেনি। কোনও সন্ত্রাসও ছড়ায়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছিল।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, যাঁরা সত্যি সত্যি স্পেন-ভাগ করতে চেয়েছিল, সরকারি অর্থ নয়ছয় করছেন এখনও, তাঁরা বহাল তবিয়তেই আছেন। সময় বুঝে শাসক দল ‘পপুলার পার্টি’তে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়ের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলাচ্ছেন।

‘‘দেশভাগকে সমর্থন না করলেও এই ধরনের ভুল পদক্ষেপে আসলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমা হয়’’, বললেন আরও ক্যাটালন। তাঁর কথায়, ‘‘রাহয়ের বোধহয় এ বিষয়টি মাথায় আসেনি। কিংবা হয়তো এই পদক্ষেপে ওঁর অন্য প্রদেশে ভোট-ব্যাঙ্ক বাড়াতে সুবিধা হবে।’’

প্রাক্তন সরকারি কর্মী নুরিয়া বলেন, ‘‘রাজনীতি তো আসলে কথা চালাচালি। গোটা ঘটনায় কিন্তু মুখ পুড়ল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার, খারাপ লাগছে সেটাই।’’

ক্যাটালোনিয়ার হাতে গোনা কিছু মানুষই গ্রেফতারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন, ৫১ বছর বয়সি অ্যান্টোনিও নাভারো। বললেন, ‘‘খুব ভাল পদক্ষেপ। ওঁরা নিয়ম ভেঙেছেন, আদালতকে অবমাননা করেছেন, গণভোটের নামে বিক্ষোভ ছড়িয়েছেন, এমনকী সংবিধানকে অবজ্ঞা করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন...!’’ নাভারোর প্রশ্ন, ‘‘নিজের মন্ত্রীদের ফেলে রেখে বেলজিয়ামে পালালেন। ওঁর কি উচিত ছিল না নিজের মন্ত্রীদের পাশে থাকা?’’ ২৩ বছরের জাভি মাগরাজোও মনে করেন, ‘‘স্বাধীনতা তো শুধু দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু সে তো নামেই। ওঁরা আসলে ক্ষমতার লোভে এবং গোটা বিশ্বের নজরে আসতে এই কাজ করেছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE