রাত ফুরোনোর আগেই মেয়াদ শেষ স্বাধীনতার! এ বার ধাপে ধাপে দখল নেওয়ার পালা।
ক্যাটালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে গত কালই প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিল স্পেন। ‘অবাধ্যতার’ অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমঁ-সহ বিচ্ছিন্নতাকামী প্রায় সব নেতাকে। আজ দিনের শুরুতে সরানো হল প্রদেশটির পুলিশ প্রধানকেও। আর ঠিক তার পরেই স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় জানিয়ে দিলেন, ক্যাটালোনিয়ায় নতুন করে ভোট হবে আগামী ২১ ডিসেম্বর। আর এ বার প্রথম থেকে ময়দানে থাকবে শুধুই মাদ্রিদের পুলিশ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার দেশ, ঘোষণার প্রস্তাব মার্কিন সেনেটের
কিন্তু স্পেনের পুলিশ তো ১ অক্টোবরেও হাজির ছিল বার্সেলোনায়! সে বার অভিযোগ উঠেছিল, ব্যালট ছিনিয়ে আর এন্তার রাবার বুলেট চালিয়ে আদতে গণভোটটাই ভেস্তে দিতে চেয়েছিল মাদ্রিদ। তবু ভোট পড়েছিল। পুইদমঁ দাবি করেছিলেন, ক্যাটালোনিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষই চাইছেন স্পেন থেকে আলাদা হতে। তবু শেষমেশ একটা রফা চাইছিলেন তিনি। কিন্তু স্পেন আলোচনায় রাজি না হওয়ায়, কাল গোপন ব্যালটে নামে ক্যাটালোনিয়ার পার্লামেন্ট। পুইদমেঁরা জিতেও যান। তার পর মাদ্রিদকে চমকে দিয়েই স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন ক্যাটালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট।
বিকেল গড়িয়ে তখন সবে সন্ধে। স্বাধীনতাকামীরা আনন্দে বার্সেলোনার রাস্তায় কাতারে-কাতারে নেমেও পড়েছিলেন। হঠাৎ শোনা গেল, ক্যাটালোনিয়াকে সরাসরি শাসনের আওতায় আনতে মাদ্রিদকে নির্দেশ দিয়ে বসেছে স্পেনের সেনেট। টেলিভিশন বক্তৃতায় রাজয় বলেন, ‘‘অত্যন্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে স্পেন। তবে আমরা মনে করি, ক্যাটালোনিয়ার সব বাসিন্দার কথা শোনা দরকার। আর তা সরাসরি তাঁদের মুখ থেকেই। চাইব তাঁরা নিজেরাই ভবিষ্যৎ বেছে নেন। ’’
সময়টা যে খারাপ, মানছে ইউরোপও। বলা হচ্ছে, গত চার দশকের মধ্যে এটাই স্পেনের সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কট। আমেরিকা তো বটেই, ফ্রান্স-জার্মানির মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বেশির ভাগ দেশ জানিয়ে দিয়েছে, ক্যাটালোনিয়ার স্বাধীনতা তারা মানছে না। স্পেনের ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করা জারি রেখেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে বড় ধরনের র্যালিও হয়েছে আজ মাদ্রিদও।
• বসবাস: স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬%
• রফতানি বাবদ আয়: দেশের মোট যা, তার ২৫.৬%
• জিডিপি: স্পেনের ১৯%
• বিদেশি বিনিয়োগ: ২০.৭%
পুইদমঁ তবু একবগ্গাই। সূত্রের খবর, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও তিনি ক্যাটালোনিয়ার স্বাধীনতাকামী জনগণকে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন জারি রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সংবিধানের ১৫৫ ধারা চাপিয়ে স্পেন যে ভাবে প্রদেশটির স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে চাইছে আজও তার বিরোধিতা করেছে ক্যাটালোনিয়ার অতি-বামপন্থী দলগুলি।
কিন্তু কেন তাঁদের এই অনড় মনোভাব? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইতিহাস আর ক্যাটালোনিয়ার নিজস্ব প্রতিপত্তির দিকেই ইঙ্গিত করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল। প্রদেশটি অনেক দিন ধরেই স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছে। এই মুহূর্তে ক্যাটালোনিয়ার বাসিন্দা ৭৫ লক্ষ, যা কিনা স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। প্রদেশটির নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। রফতানি বাবদ স্পেনের মোট যা আয়, তার প্রায় ২৬ শতাংশই আসে এখান থেকে। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রেও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে প্রদেশটির। স্পেনও তাই সহজে ছাড়তে নারাজ ক্যাটালোনিয়াকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy