আতঙ্ক: সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন দেহ। রবিবার মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে। রয়টার্স
ফের একটা রবিবার। ফের হামলা গির্জায়। মিশরে আজ জোড়া হামলায় আক্রান্ত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানরা। একসঙ্গে দু’টি গির্জায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৪৩ জনের। আহতের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। এই ঘটনার পরে দেশ জুড়ে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ-আল সিসি
গত ডিসেম্বরের এক রবিবারে রাজধানী কায়রোর একটি ভিড়ে ঠাসা গির্জায় এ ভাবেই হামলা চালিয়েছিল ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস। মারা গিয়েছিলেন ২৯ জন। আজও সেই ‘সানডে মাস’-এর ভিড়কেই কাজে লাগিয়েছে তারা। পবিত্র ‘পাম সানডে মাস’-এর জন্য জড়ো হওয়া ভক্তদের ভিড় এক মুহূর্তে পাল্টে গিয়েছে হুড়োহুড়ি, কান্না, আতঙ্ক আর আর্তনাদে। আজকের জোড়া হামলার দায় নিয়েছে আইএস-ই।
আজ প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে নীল বদ্বীপ অঞ্চলের টানটা শহরের মার গিরগিজ গির্জায়। কায়রো থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের এই ছোট শহরে কপ্টিক খ্রিস্টানদের একটি বসতি রয়েছে। সকাল তখন দশটা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ভিড়ে ঠাসা প্রার্থনা কক্ষের সামনের সারিতে আচমকা বিকট আওয়াজ। আগুনের গোলা তখন ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। গির্জা কক্ষের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে দেহ। কেউ নিথর। কারও দেহে তখনও রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু শরীর থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে দেহাংশ। ঘটনার খবর পেয়ে আসতে শুরু করে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। কোনও আত্মঘাতী জঙ্গি এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে না কি, আগে থেকেই গির্জার ভিতরে বিস্ফোরক মজুত করা ছিল, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। টানটার বিস্ফোরণেই কমপক্ষে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
দ্বিতীয় বিস্ফোরণস্থল উপকূলবর্তী আলেকজান্দ্রিয়া শহরের সেন্ট মার্কস গির্জা। সেখানেও ‘পাম সানডে মাস’-এর জন্য ভিড় করেছিলেন কপ্টিক খ্রিস্টানরা। এই হামলায় নিহত হন ১৬ জন। সামনেই ইস্টার সপ্তাহ। আজকের দিনটিকে বলে ‘পাম সানডে’। যিশু খ্রিস্টের জেরুজালেম প্রবেশের এই দিনটাকে খুবই পবিত্র বলে মনে করেন খ্রিস্টানরা। ঘটনার খবর পেয়ে দু’টি জায়গাতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট।
মিশরের কপ্টিক খ্রিস্টানদের উপর হামলার ঘটনা এই প্রথম নয় অবশ্য। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোরসিকে সরানোর পিছনে এই সম্প্রদায়ের হাত রয়েছে বলে মনে করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁদের উপর পড়শি মুসলিম সম্প্রদায়ের হামলার ঘটনা লেগেই থাকত। ২০১৪ সালের পর থেকে সেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। দেখা যায়, ইরাক সিরিয়ার মতো মিশরের সংখ্যালঘুদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে আইএস। ২০১৫ সালে লিবিয়ায় কর্মরত ২১ জন খ্রিস্টানকে নৃশংস ভাবে মেরে ফেলে তারা। তাদের আতঙ্কে সিনাই উপদ্বীপ থেকে শয়ে শয়ে খ্রিস্টান ইতিমধ্যেই আশ্রয় নিয়েছেন পড়শি দেশে।
পোপ ফ্রান্সিস এই জোড়া হামলার কড়া নিন্দা করেছেন। এ মাসের শেষের দিকে মিশরে গিয়ে কপ্টিক খ্রিস্টানদের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর। আজ ভ্যাটিকানে ‘মাস’ চলাকালীন হাজার হাজার ভক্তদের সামনে পোপ বলেন, ‘‘নিহত আর আহতদের জন্য আমি প্রার্থনা করি। সন্ত্রাস, হিংসা আর মৃত্যুর বীজ যারা নিজেদের হৃদয়ে বপন করে, ঈশ্বর তাদের আত্মা পাল্টে দিক, এই কামনাই করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy