ভোজ: চিড়িয়াখানায় ভালুকের জন্য বিশাল আইসক্রিম। এপি
তোমাদের তো ওখানে গরমে ভুগতে হয় না। এখানে যা গরম পড়ে! সুইৎজ়ারল্যান্ডে বসে দেশ থেকে করা আত্মীয়-বন্ধুদের ফোনে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের কথা শুনতে হয়। ভারতের গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে যাঁরা এই খেদোক্তি করেন, তাঁদের কী করে বোঝাব যে, বরফের দেশ সুইৎজ়ারল্যান্ডও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গরমের তীব্র প্রকোপে ভুগছে।
গত কয়েক দিন ধরে এ দেশের অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যে দেশে বরফ পড়া ছিল স্বাভাবিক, সেই দেশে এ রকম গরমে বিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদরা খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।
এখানকার আবহাওয়া দফতর ‘মিটিয়ো সুইস’-এর এক শীর্ষ আধিকারিক পিটার বিন্দার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সুইৎজ়ারল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। যা খুবই চিন্তার বিষয়। তবে বসে নেই এ দেশের পরিবেশপ্রেমীরা। জুলাই মাসের শুরুতে দেশের সর্ববৃহৎ দু’টি ব্যাঙ্ক— ইউবিএস এবং ক্রেডিট সুইস-এর সামনে ‘কালেক্টিভ ক্লাইমেট জাস্টিস’ নামে এক সংগঠনের তরফ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের মূল দাবি, আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য দায়ী ব্যাঙ্কগুলো। কারণ এরাই বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন, কয়লা ও খনিজ তেল) সংস্থাগুলোতে ক্রমাগত অর্থ লগ্নি করে চলেছে।
এই প্রচণ্ড গরমে সরকারের তরফ থেকেও নাগরিকদের জন্য নানা সতর্কতা জারি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে বরাবর দেখে এসেছি, বিকেল হলেই এখানকার মানুষজন বাগানে বা বারান্দায় বারবিকিউ করতে বসে পড়েন। খোলা একটা বৈদ্যুতিক তন্দুরে মাংস সেঁকে কাবাব বানিয়ে সকলে মিলে মজা করে খাওয়াদাওয়া চলে। সঙ্গে ঠান্ডা পানীয়। এখানে গরমকালে আবহাওয়া এতটাই সুন্দর থাকে যে, সবাই কাজ থেকে ফিরে বা ছুটির দিনে খোলা জায়গাতেই সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু এ বার এই তীব্র গরমে সেটা প্রায় বন্ধ।
স্বাভাবিকের থেকে বেশি তাপমাত্রায় আরও নানা রকমের সমস্যাও হচ্ছে। যেমন কয়েক দিন আগে রেললাইন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় কয়েকটি জায়গায় ট্রেন চলাচল কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। এ দেশে সবাই অবশ্য সময়ানুবর্তিতা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। তাই এই ঘটনায় অপ্রস্তুত ট্রেন সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার জন্য যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে, তা বাঁচাতে যে স্টেশনগুলোয় কম সংখ্যক যাত্রী ওঠানামা করেন, সেখানে ট্রেন দাঁড়াবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে ট্রেন সংস্থার এই সিদ্ধান্ত কতটা নৈতিক, তা নিয়ে অবশ্য শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
তবে এ সবের মধ্যে নতুন খাবারের স্বাদ পাচ্ছে নিউটন, জাইকো, লাইকা আর মার্টিন। গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ান এই ভালুকদের জন্য সার্ভিয়ঁ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ রোজ তৈরি করছেন ১৫ কেজির আইসক্রিম।
হ্যাঁ, ভালুকরাও এ দেশে আইসক্রিম খায়!
লেখক আর্থিক প্রযুক্তি কর্মী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy