Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
International News

৯০ শতাংশ ভোট স্বাধীনতার পক্ষে, ঘোর অস্বস্তিতে স্পেন

সরকারের বাধা অগ্রাহ্য করে গণভোট হল ক্যাটালনিয়ায়। ৯০ শতাংশ ভোট পড়ল স্বাধীনতার পক্ষে।

গণভোট শেষ হওয়ার পর বার্সেলোনায় উল্লাস স্বাধীনতাপন্থী ক্যাটালানদের। ছবি: রয়টার্স।

গণভোট শেষ হওয়ার পর বার্সেলোনায় উল্লাস স্বাধীনতাপন্থী ক্যাটালানদের। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ১৬:০১
Share: Save:

ব্যালট ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া, পুলিশি অভিযান, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট। এত কিছুর পরেও রোখা গেল না ক্যাটালনিয়ার গণভোট। শুক্রবার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাটালনিয়ার বাসিন্দাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ভোট দিলেন। স্পেন সরকারের অস্বস্তি বহুগুণ বাড়িয়ে প্রদত্ত ভোটের ৯০ শতাংশই পড়ল ক্যাটালনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে জানালেন, এই গণভোটের কোনও বৈধতাই নেই। আর স্বাধীনতাপন্থীরা ঘোষণা করলেন, ‘ক্যাটালনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে।’

অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে স্পেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির অন্যতম ক্যাটালনিয়া। কিন্তু স্পেনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠার দাবি ওই অঞ্চলে দীর্ঘ দিনের। ক্যাটালানদের ক্ষোভ মূলত অর্থনৈতিক কারণেই। সাংস্কৃতিক পার্থক্যও রয়েছে। সব মিলিয়েই স্বাধীনতার দাবি প্রায় ৭৫ লক্ষ জনসংখ্যার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে।

পরিসংখ্যান বলছে, ক্যাটালনিয়ায় স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বাস। কিন্তু ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি ইউরোর স্প্যানিশ অর্থনীতির ২০ শতাংশই এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অবদান। বার্সেলোনা থেকে পরিচালিত ক্যাটালনিয়া সরকারের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, ক্যাটালনিয়াকে তার প্রাপ্যটুকু দেয় না মাদ্রিদ। শুধু সরকার নয়, সাধারণ ক্যাটালনদের মতও একই। স্পেনের জাতীয় সরকার ক্যাটালনিয়া থেকে যতটা পায়, ক্যাটালনিয়ার জন্য খরচ করে তার চেয়ে অনেক কম, অভিযোগ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির বাসিন্দাদের। ক্যাটালনিয়ার পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন বিভাগ সৈকত শহর বার্সেলোনা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু কর ব্যবস্থা, বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বন্দর, বিমানবন্দর, রেল ব্যবস্থা মাদ্রিদ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। ক্যাটালনিয়া থেকে আদায় হওয়া কর জমা পড়ে মাদ্রিদের রাজকোষে। সেখান থেকেই অন্য সব রাজ্যের মতো ক্যাটালনিয়ার জন্যও অর্থ বরাদ্দ করে স্পেনের সরকার। এই ব্যবস্থা নিয়েই আপত্তি রয়েছে ক্যাটালনদের। উত্তর স্পেনের বাসকিউ এবং নাভারে প্রদেশ যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়, ক্যাটালনিয়াও সেই রকম স্বাধীনতাই দাবি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। বাসকিউ এবং নাভারে প্রদেশ থেকে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার কর আদায় করে না। প্রাদেশিক প্রশাসনই তা আদায় করে। কোন খাতে, কী ভাবে সে টাকা খরচ করা হবে, তা-ও প্রাদেশিক প্রশাসনই স্থির করে। বহু বছর ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসা ক্যাটালনিয়া এই অধিকার বার বার দাবি করেও পায়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে যে পরিমাণ বরাদ্দ বার্সেলোনা চায়, মাদ্রিদ তা-ও দেয় না বলে অভিযোগ।

স্পেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে ক্যাটালনিয়ার মুক্তির পক্ষে যে বিপুল ভোট পড়েছে, তাতে মাদ্রিদের কর্তারা যথেষ্ট উদ্বেগে। এই গণভোটকে অবশ্য মান্যতা দিচ্ছে না স্পেনের সরকার। ছবি: রয়টার্স।

ক্যাটালানরা সাংস্কৃতিক দিক থেকেও স্পেনের মূল ধারার চেয়ে কিছুটা আলাদা। ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত স্পেনে যে একনায়কতন্ত্রী শাসন চলেছিল, সেই সময়ে ক্যাটালানদের সংস্কৃতি, পরম্পরা এবং ভাষাকে নানা ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছিল বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ক্ষোভ রয়েছে তা নিয়েও।

আরও পড়ুন: হাফিজকে ‘আমেরিকার ডার্লিং’ বলে মামলার মুখে পাক বিদেশমন্ত্রী

২০১০ সালে স্পেনের সাংবিধানিক আদালত একটি সনদের অংশবিশেষ খারিজ করে দিয়েছিল, যে সনদে ক্যাটালনিয়াকে স্পেনের মধ্যেই একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং ওই অঞ্চলে আরও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছিল। আদালতের এই রায় ক্যাটালনের মধ্যে মাদ্রিদ বিরোধী ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে। স্বাধীনতার দাবি আরও তীব্র হতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গণভোটের আয়োজন হয়েছিল ক্যাটালনিয়ায়। এ বছর আবার গণভোট হল।

মাদ্রিদ এই গণভোট রুখতে মরিয়া ছিল। তাতে জেদ বেড়ে যায় স্বাধীনতাপন্থীদের। ভোট করাতে ক্যাটালনিয়ার প্রায় সব স্কুল-কলেজ দখল নিয়ে নেন স্বাধীনতাপন্থীরা। স্পেনের পুলিশ যাতে কোনও ভাবেই ভোটে নাক গলাতে না পারে, তার জন্য স্কুল গেটগুলির মুখে অবরোধও তৈরি করা হয়েছিল। গোপনে বন্দোবস্ত করা হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার ব্যালট বাক্সের।

আরও পড়ুন: কনসার্টে এলোপাথাড়ি গুলি, লাস ভেগাসে হত ২০, জখম বহু

কিন্তু মাদ্রিদ রাতারাতি স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে। বৈদ্যুতিন ভোটিং ব্যবস্থা অকেজো করতে ক্যাটালনিয়ার টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মাদ্রিদ। অনলাইন ভোটিং-ও যাতে না হয়, তা-ও নিশ্চিত করা হয়। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়, তল্লাশি। সে সবের মধ্যেও অবশ্য অনেকেই ভোট দিলেন। ৯০ শতাংশ ভোটই ক্যাটালনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে পড়ল।

স্প্যানিশ জাতীয় ফুটবলার জেরার্ড পিকেও ক্যাটালনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষেও মুখ খুলেছেন। তিনি গণভোটে অংশও নিয়েছে। এর জন্য তাঁকে যদি জাতীয় দল থেকে বাদও দেওয়া হয়, তা হলেও তিনি স্বাধীনতার দাবিতেই অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় ফুটবলার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE