প্রায় আঠারো হাজার ফুট উঁচু এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে তুষারধসের মারণরূপ সামনে থেকে দেখেছেন ওঁরা। তবু বিপর্যয়ের পর বাহাত্তর ঘণ্টা কেটে গেলেও সেই বিধ্বস্ত বেস ক্যাম্পেই বসে রয়েছেন অন্তত দেড়শো জন অভিযাত্রী। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আসা। তাই মালপত্র গুটিয়ে নেমে আসার আগে নেপাল সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণাটা শুনতে চান যে, এ বারের মতো এভারেস্ট অভিযান বাতিল।
কিন্তু সেই সরকারি ঘোষণা এখনও হয়নি। কেউ কেউ অবশ্য তার অপেক্ষা না করে ইতিমধ্যেই বেস ক্যাম্প ছেড়ে গিয়েছেন। বাঙালি অভিযাত্রীদের অনেকে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন নীচে গোরকশেপে। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকেও নামতে শুরু করেছেন তাঁরা। হাওড়ার মলয় মুখোপাধ্যায়, বারাসতের সুনীতা হাজরা, হরিদেবপুরের সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, পলতার লিপিকা বিশ্বাস, কসবার সৌরভসিঞ্চন মণ্ডল, মধ্যমগ্রামের রমেশ রায়, ব্যারাকপুরের গৌতম ঘোষ, সোনারপুরের রুদ্রপ্রসাদ হালদার মঙ্গলবার সন্ধেয় প্যাংবোচে পৌঁছে গিয়েছেন। তবে এত জন অভিযাত্রী একসঙ্গে নামতে থাকায় ভিড় জমেছে ওই অঞ্চলে। প্যাংবোচের নীচে তেংবোচে, নামচে বাজার, ফাকদিং, লুকলা— এই সমস্ত জায়গায় এখন তীব্র স্থানসঙ্কট হবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিযাত্রীরা।
আসলে শনিবারের ভূমিকম্প যে তাঁদের সমতলের বহু পুরনো ঠিকানাগুলোও গুঁড়িয়ে দিয়েছে, এত দিন বেস ক্যাম্পে থাকা অভিযাত্রীরা সেটা জানবেন কী করে! যে কাঠমান্ডু শহর থেকে হইহই করে যাত্রা শুরু করেছিলেন, যে হোটেলে ছিলেন— সবই এখন ধ্বংসস্তূপ! অভিযানে বেরোনোর আগে যে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনেছিলেন, সেই আস্ত বাজারে এখন শুধুই মৃত্যুর পসরা।
বেস ক্যাম্প থেকে দেবরাজ দত্ত বলছিলেন, প্রায় দেড়শো অভিযাত্রী এখনও সেখানে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভারতীয়ের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। রয়েছে অসম, বেঙ্গালুরুর অভিযাত্রী দল। টাটা গোষ্ঠীর অভিযাত্রী দলও বেস ক্যাম্প ছাড়েনি এখনও। আছে ভারতীয় সেনার একটি দলও। বাঙালিদের মধ্যে দেবরাজের সঙ্গে রয়েছেন প্রদীপ সাহু ও চেতনা সাহু। দেবরাজ বললেন, ‘‘গত বছরও খুম্বুর দুর্ঘটনায় ফিরে গিয়েছিলাম বেস ক্যাম্প থেকে। এ বছরও হয়তো ফিরতে হবে। কিন্তু সরকারি ভাবে কিছু নির্দেশ এখনও আসেনি।’’
সোমবার ও মঙ্গলবার আকাশ পরিষ্কার থাকায় ভাল মতোই উদ্ধার কাজ চালানো গিয়েছে বেস ক্যাম্পে। দেবরাজ জানালেন, বেস ক্যাম্পের ওপরে ক্যাম্প ওয়ানে আটকে থাকা অভিযাত্রীদের সকলকেই নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে বেস ক্যাম্পে তুষার ধসে নিখোঁজ অভিযাত্রীর সংখ্যাটা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা উজ্জ্বল রায় জানালেন, কলকাতা থেকে তিন পর্বতারোহী রাজীব ভট্টাচার্য, দেবদাস নন্দী ও বিপ্লব বৈদ্য সোমবার গভীর রাতে কাঠমান্ডু গিয়ে পৌঁছেছেন। অভিযাত্রীদের কী ভাবে তাড়াতাড়ি কাঠমান্ডু নিয়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন তাঁরা। তবে এটাও ঠিক, কম্পন-বিধ্বস্ত কাঠমান্ডুতে কোনও রকম প্রশাসনিক কাজকর্ম এই মুহূর্তে কার্যত অসম্ভব। হু হু করে বেড়ে চলেছে মৃত্যু-মিছিল। সেই সামলাতেই সরকার হিমসিম। এই অবস্থায় অভিযাত্রীদের ফেরানোর ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই পর্বতারোহীরা।
বেস ক্যাম্প যদিও প্রহর গুনছে, সেই মৃত্যুপুরী থেকেই কখন শোনা যাবে অভিযান বাতিল হওয়ার ঘোষণা। বুক ভাঙবে, কিন্তু শেষ হবে অসহ্য উৎকণ্ঠাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy