Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

যেন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে! গজগজ করছেন অফিসার

কোট-প্যান্ট পরা এক বিডিও মঞ্চের খুঁটি ধরে নাড়ানাড়ি করছিলেন। কেমন বুঝছেন? প্রশ্নটা শুনেই কাষ্ঠ হেসে বললেন, “মনে তো হয় শক্তপোক্তই হয়েছে।” দ্রুত এগিয়ে গেলেন অন্য খুঁটির দিকে। মঞ্চের উপরে তখন অন্য এক বিডিও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের তালিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিলেন। পাশে থাকা নিজের ব্লকেরই এক কর্মীকে বললেন, “ভাল করে দেখুন কোনও প্রকল্পের শিলান্যাস ফলকে আবার ভুল করে উদ্বোধন লেখা হয়ে যায়নি তো? চোখ ফস্কে গেলে কপালে কী থাকবে কে জানে বাবা!”

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

কোট-প্যান্ট পরা এক বিডিও মঞ্চের খুঁটি ধরে নাড়ানাড়ি করছিলেন। কেমন বুঝছেন? প্রশ্নটা শুনেই কাষ্ঠ হেসে বললেন, “মনে তো হয় শক্তপোক্তই হয়েছে।” দ্রুত এগিয়ে গেলেন অন্য খুঁটির দিকে।

মঞ্চের উপরে তখন অন্য এক বিডিও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের তালিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিলেন। পাশে থাকা নিজের ব্লকেরই এক কর্মীকে বললেন, “ভাল করে দেখুন কোনও প্রকল্পের শিলান্যাস ফলকে আবার ভুল করে উদ্বোধন লেখা হয়ে যায়নি তো? চোখ ফস্কে গেলে কপালে কী থাকবে কে জানে বাবা!” হঠাৎই এক জন দৌড়ে এলেন, “সবাই জলদি চলুন! এসডিও সাব মিটিংয়ে ডেকেছেন।” ডেকোরেটর্সের কর্মীদের কাছে কাজ শেষ হতে আর কত দেরি, খোঁজ নিচ্ছিলেন এক আধিকারিক। তিনি বিরক্তি ভরা মুখে বলে ওঠেন, “উফ্, এই তো সকালেই মিটিং হল। আবার কেন তলব?”

কিন্তু, তা বললে কি চলে? ২৪ ঘণ্টা পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সভা বলে কথা! মাঠ ফেলে অফিসারেরা ছুটলেন নিজেদের গাড়ির দিকে।

আজ, মঙ্গলবার রামপুরহাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। তার আয়োজনেই সোমবার অফিস ফেলে রামপুরহাট হাইস্কুলের মাঠে ব্যস্ত থাকলেন মহকুমার বিডিও এবং যুগ্ম-বিডিওরা। আর সেই সময় বিভিন্ন কাজে ব্লক অফিসে এসে ঠায় বসে থেকে খালি হাতেই ফিরেছেন মানুষজন। যেমন, মুরারই ২ ব্লক অফিসে বসেছিলেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দা কল্যাণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। আক্ষেপ করছিলেন, “ট্রেনের মান্থলির জন্য বিডিওর কাছে আয়ের শংসাপত্র নিতে সেই শুক্রবার থেকে ঘুরছি। দেখাই পাচ্ছি না! কর্মীরা জানালেন, বিডিও মুখ্যমন্ত্রীর সভার তদারকিতে ব্যস্ত। বুধবারের আগে তাঁর দেখাই পাওয়া যাবে না।” রামপুরহাট ২ ব্লক অফিসে গিয়েও দেখা মিলল কয়েক জনের, যাঁরা জরুরি কিছু কাগজপত্রে সই করাতে অথবা শংসাপত্র নিতে এসেছেন। মাড়গ্রাম থানার টিঠিডাঙা গ্রামের রসিমুদ্দিন শেখের কথায়, “ভাংলা কাঁদর পেরিয়ে বহু দূর থেকে এসেছিলাম। ব্লক অফিসের কর্মীরা বলে দিলেন, বিডিও সাহেব নেই। দু’দিন কোনও কাজ হবে না।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, রামপুরহাট মহকুমার ৮টি ব্লক অফিস থেকে সোমবার ও মঙ্গলবারের জন্য প্রত্যেক বিডিও এবং যুগ্ম বিডিও তো থাকবেনই। পাশাপাশি তাঁদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ব্লক অফিসের দক্ষ ছয় থেকে আট জন কর্মীকে তুলে নিয়ে যেতে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই অফিসার-কর্মীদের কাউকে ভিআইপিদের খাতির-যত্ন করতে হবে, কাউকে বিভিন্ন স্টলের দেখাশোনা করতে হবে। এমনকী অতিথিদের চা, কফি দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে কোনও কোনও বিডিওকে!

কিন্তু, না বলার উপায় নেই। বিশেষ করে পড়শি জেলা বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘মাটিতীর্থ’ উৎসব সফল করতে গিয়ে বিডিও থেকে মহকুমাশাসকদের যে পরিমাণ খাটনি গিয়েছে, তা মাথায় রেখে আরও উদ্বিগ্ন বীরভূম জেলা প্রশাসন। এক বিডিও-র কথায়, “অন্তত বর্ধমানের মতো আমাদের ঘাড়ে লোক জোগাড়ের দায়িত্বটা যে পড়েনি, সেটাই বিরাট বাঁচোয়া! তবু, যা আছে, তাই বা কম কী? এ বার চাপ যেন আরও বেশি।” জেলা প্রশাসনের আর এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “সেই শুক্রবার থেকে এক বার এই কর্তা, এক বার অন্য কর্তা মিটিংয়ে ডাকছেন। সেই সঙ্গে রামপুরহাট হাইস্কুলের মাঠে সভাস্থলে গিয়ে ডেকরেটর্সের লোকজনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলতে হচ্ছে। নাওয়া-খাওয়া কার্যত শিকেয় উঠেছে। মনে হচ্ছে যেন আমার মেয়ের বিয়ে!”

মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নতুন করে সেজে উঠেছে রামপুরহাটের মাঝখণ্ড গ্রাম লাগোয়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পরিদর্শন বাংলো ‘পান্থশ্রী’। সোমবার মাটিতীর্থ উৎসব সেরে তারাপীঠে মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে সন্ধে পৌনে আটটা নাগাদ সেখানেই উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বাংলো সংলগ্ন প্রায় ৭০০ বর্গ ফুট জায়গায় রাতারাতি বিশেষ ঘাসের কার্পেট বসানো হয়েছে। সে জন্য খরচ হয়েছে অন্তত ছ’লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী চাইলে সকালে উঠে তার উপরে পায়চারিও করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় প্রায় ৬০টি খুঁটি পুঁতে আলাদা ভাবে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে আসা হয়েছে। সে বাবদও প্রায় লাখ ছয়েক টাকা খরচ করা হয়েছে। সবই যাবে করদাতাদের পকেট থেকে।

আর হঠাৎ যদি শিল্পী-সত্তা জেগে ওঠে? সে সম্ভাবনাও যে বড্ড প্রবল! কলকাতা থেকে তাই চলে এসেছে মমতার প্রিয় রং-তুলি।

অন্য বিষয়গুলি:

apurba chattopadhyay rampurhat mamatabandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE