Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

মাদ্রাসা নিয়ে অনশনের হুমকি নবান্নে

প্রতিশ্রুতির তুফান তোলা হয়েছে বারবার। কিন্তু মাদ্রাসা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কথা রাখেনি বলে অভিযোগ তুলল সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিল। অভিযোগেই শেষ নয়। ওই সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, মাদ্রাসা নিয়ে দাবি পূরণ না-হলে ১২ ফেব্রুয়ারি পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী আমরণ অনশনে বসবেন। এবং সেই লাগাতার অনশন হবে খাস নবান্নের চার দিকে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তিনি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার ছ’মাসের মধ্যে তার ৯৯% পালন করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

প্রতিশ্রুতির তুফান তোলা হয়েছে বারবার। কিন্তু মাদ্রাসা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কথা রাখেনি বলে অভিযোগ তুলল সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিল। অভিযোগেই শেষ নয়। ওই সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, মাদ্রাসা নিয়ে দাবি পূরণ না-হলে ১২ ফেব্রুয়ারি পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী আমরণ অনশনে বসবেন। এবং সেই লাগাতার অনশন হবে খাস নবান্নের চার দিকে।

সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তিনি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার ছ’মাসের মধ্যে তার ৯৯% পালন করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। যদিও সংখ্যালঘু নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা এই দাবি মানতে পারছেন না। প্রথমে রেড রোডে ঈদের নমাজ পাঠের অনুষ্ঠানে এবং পরে বহু বার এই নিয়ে ক্ষোভ, কটাক্ষ এবং সমালোচনা শুনতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীকে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল মাদ্রাসা নিয়ে সরকারের দাবিও।

সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের শিক্ষার বিস্তারে ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হাতেই রয়েছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব। ওই ঘোষণার সময়েই প্রশ্ন উঠেছিল, রাজ্যে আদৌ ১০ হাজার মাদ্রাসা আছে কি? তবু মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করায় ভরসা রেখেছিলেন সংখ্যালঘু মানুষ। কিন্তু সরকারের বয়স প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিক্রম করার পরে সেই ঘোষণাই এখন কড়া সমালোচনার মুখে। সোমবার ভারত সভা হলে সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিলের সভায় এই প্রসঙ্গ টেনে বক্তারা কটাক্ষ করেন, ১০ হাজার লাগবে না। বর্তমান সরকার এক হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দিক এবং তাদের জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করুক। আর মাদ্রাসার অনুমোদন দিতে যদি আপত্তি থাকে, তা হলে সংখ্যালঘু এলাকায় অন্তত কিছু ভাল স্কুলের ব্যবস্থা করুক।

ওই কাউন্সিলের দাবি, ১০ হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার সাড়ে তিন বছর পরে এখন পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র ২৩৭টি মাদ্রাসা অনুমোদন পেয়েছে। সেই সব মাদ্রাসাও এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পায়নি। এ ক্ষেত্রে তুলনা দিতে গিয়ে বাম জমানার কথা টেনে এনেছে কাউন্সিল। তাদের বক্তব্য, বাম আমলে স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসাগুলি সরকারের কাছ থেকে সব রকম আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সরকার কোনও অর্থসাহায্যই করছে না। সরকারি সহায়তা ছাড়া স্বীকৃতি দিতে গিয়ে সংগঠিত মাদ্রাসাগুলিকে নানা ভাবে হয়রান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কাউন্সিল।

মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বাম জমানার সঙ্গে বর্তমান সরকারের তৎপরতার তুলনা টানতে গিয়ে এ দিনের সভায় নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত দেন সাতুলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, বাম আমলে তাঁর মাদ্রাসা ছ’টি কম্পিউটার পেয়েছিল। তবে তা নিয়ে তখনকার সরকারের তরফে কোনও রকম ঢাকঢোল পেটানো হয়নি। সরকারি আধিকারিকেরা নীরবে কম্পিউটার পৌঁছে দিয়েছিলেন স্কুলে। আর এই আমলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী সভা করে ওই মাদ্রাসায় চারটি কম্পিউটার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্রও তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এখনও সেই কম্পিউটার দিতে পারেনি। এক সংখ্যালঘু নেতার মন্তব্য, “রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে কোনও কাজ না-করে শুধু প্রচার চালাচ্ছে।”

এই অবস্থায় কাউন্সিলের হুঁশিয়ারি, অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা না-করলে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে নবান্ন ঘিরে অনশনে বসবেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা।

কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামানের দাবি: অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলিকে অবিলম্বে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে সামিল করে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের সব রকম সুযোগ দিতে হবে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করতে হবে সরকারকে।

অন্য বিষয়গুলি:

madrasah nabanno west bengal minority cell
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE