বারো মাসে তেরো নয়, তেত্রিশ পার্বণের দিকেই সম্ভবত এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার! বছরভর মেলা-খেলা আর উৎসবের তালিকায় তাদের নয়া সংযোজন ‘উইকএন্ড ফোক ফেস্টিভ্যাল’। সপ্তাহান্তিক লোক উৎসব।
ভাঁড়ারে টানাটানি যতই থাক, নতুন এই উৎসবের জন্য ইতিমধ্যেই ৬৪ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে অমিত মিত্রের অর্থ দফতর। আর মাটি উৎসবের জন্য বরাদ্দ ৩১ লক্ষ। দুইয়ে মিলিয়ে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৯৫ লক্ষ টাকা। অথচ প্রায় সব সভা-সমাবেশেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় নিয়ম করে ‘কেন্দ্র প্রতি মাসে ২৮ হাজার কোটি টাকা কেটে নিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করে চলেছেন।
প্রশ্ন উঠছে, রাজকোষের টাকায় আরও একটি উৎসব কেন?
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, অতীতে জেলাওয়াড়ি লোকসংস্কৃতি উৎসব হত। মাঝখানে কয়েক বছর সেটা বন্ধ থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই ধাঁচেই নতুন উৎসব চালু হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীই ওই উৎসবের নাম দিয়েছেন ‘উইকএন্ড ফোক ফেস্টিভ্যাল’। ৬ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যের ১৯টি জেলাতেই (কলকাতা বাদে) সপ্তাহান্তে শুক্র, শনি ও রবিবার ওই উৎসব হবে। তার আয়োজন বুঝে তিন বা চার লক্ষ টাকা পাবে জেলাগুলি।
নবপার্বণের খরচ দেবে কে?
নবান্নের এক কর্তা জানান, অতীতে লোকসংস্কৃতি উৎসবের জন্য প্রতি জেলাকে বড়জোর ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হত। এ বার সেই বরাদ্দ ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আচমকাই ওই উৎসবের কর্মসূচি তৈরি হওয়ায় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা খাতের বাইরে গিয়েই এর পিছনে খরচ করবে। অর্থ দফতর তার জন্য বিশেষ অনুমোদনও দিয়েছে। শিল্পী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সরকারের তালিকাভুক্ত লোকশিল্পীদের।
সপ্তাহান্তিক লোক উৎসবের আগেই, ২৮ জানুয়ারি পানাগড়ে শুরু হচ্ছে মাটি উৎসব। তার বাজেট ৩১ লক্ষ টাকা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধন করলেও ফোক ফেস্টিভ্যালের সূচনা তিনি করবেন কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি।
ঋণে জর্জরিত রাজ্যে মেলা-খেলা-উৎসবের পিছনে দেদার খরচ বিলাসিতা কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক শিবির এই নিয়ে সরব তো বটেই। প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (পিএজি)-এর দফতরও সরকারের বেহিসেবি খরচ, আর তা সামাল দিতে গিয়ে প্রতি মাসে ধার করার ‘সংস্কৃতি’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশ্লেষণ করে তারা দেখিয়েছে, বাজেট বরাদ্দের মাত্র ২৭ শতাংশ পরিকল্পনা খাতে খরচ করেছে রাজ্য। মেলা-খেলা-উৎসব-পুরস্কার এবং হাজার হাজার ক্লাবকে অনুদান দিতেই বিস্তর খরচ হচ্ছে। নবান্নের খবর, ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে মেলা-খেলা বাবদ রাজকোষ থেকে ১৮১ কোটি টাকা অগ্রিম তোলা হয়েছিল। এখনও তার হিসেব পেশ করতে পারেনি সরকার। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ট্রেজারি থেকে নেওয়া এই অগ্রিমের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। তার উপরে প্রতি মাসে বাজার থেকে গড়ে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া সমানে চলছে।
এই পরিস্থিতিতে একের পর এক মেলা-উৎসব ঘোষণা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের দিদির একটাই কাজ মেলা। মানুষের সঙ্গে করছেন প্রতারণার খেলা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy