এসএফআইকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ঢুকতে দেওয়ায় পুলিশকে শাসানি টিএমসিপি সমর্থকদের। মল্লারপুর কলেজে। ছবি: অনির্বাণ সেন
মূল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছায়া ফেলছে ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও। ছাত্র সংসদের ভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, ততই বিভিন্ন কলেজে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আলাদা আলাদা গোষ্ঠী। সোমবার তেমনই দ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা এবং বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের দু’টি কলেজ।
সোমবার টিএমসিপি-র গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে বড়সড় গোলমাল পাকায় উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বিআর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে। অভিযোগ, এ দিন দুপুরে এক দল বহিরাগত লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে পড়ে অধ্যক্ষের ঘরে। টেবিল চাপড়ে চলে হুমকি, শাসানি, কটূক্তি। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মারধরও করা হয়েছে। প্রহৃত হয়েছেন কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীও। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। পুলিশ আসার আগেই অবশ্য তাণ্ডব চালিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায় হামলাকারীরা।
কিন্তু হামলা ঠিক কী কারণে, তা নিয়েই অন্ধকারে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিচালন সমিতির সভাপতি নকুলচন্দ্র হীরা বলেন, “এমন নয় যে আমরা কোনও অন্যায় করেছি। কেন হামলা হল, তা বুঝলামই না।” তবে সামনেই কলেজ ভোট। তাকে কেন্দ্র করেই ছাত্র সংসদের নেতৃত্বের সঙ্গে ইউনিট কমিটির মনোমালিন্যের জেরে এ দিনের ঘটনা বলে অনুমান কলেজ কর্তৃপক্ষের। গোটা ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রূপলীনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর।
সরাসরি কোনও দলের নামে অবশ্য লিখিত অভিযোগ করেননি অধ্যক্ষ। বহিরাগতরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষের কাছে পৃথক দু’টি অভিযোগ করেছেন জখম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অমৃত মাল এবং প্রহৃত নিরাপত্তারক্ষী প্রাণ বিশ্বাস। অমৃতর প্রাথমিক চিকিত্সা করানো হয় বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে। দু’জনেই এ দিনের ঘটনায় দায়ী করেছেন এক দল বহিরাগতকে।
বাগদায় তৃণমূলের অন্দরে কোন্দলের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকে। দলেরই একাংশের মতে, বড়দের মধ্যে দলাদলির প্রভাব পড়ছে ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও। তৃণমূলেরই একাংশ যে এই ঘটনায় জড়িত, তা বলছেন কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্মরজিত্ ঢালিও। তিনি বলেন, “তৃণমূলের লোকজন হামলা চালিয়েছে। ওরা আমাকে এবং ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট মৃণাল বিশ্বাসকে লাঠি-রড নিয়ে তাড়া করেছিল। ইউনিয়ন রুমে ঢুকেও চেয়ার-টেবিল উল্টে তাণ্ডব চালিয়েছে।” অমৃত বলেন, “শেখ শাহ আলম হোসেন নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের নেতৃত্বেই বহিরাগতেরা কলেজে ঢুকেছিল।”
কে এই শাহ আলম? তিনি আবার টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিট কমিটির নেতা। তাঁর দাবি, “উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে এ দিন কলেজে গিয়েছিলাম। অধ্যক্ষের ঘরে কথা চলছিল। সে সময়ে শুনি, বাইরে কিছু ছেলে চিত্কার-চেঁচামেচি করছে। পরে শুনি, অমৃত কাউকে মারধর করছিল। ছাত্রেরাই তার প্রতিবাদ করে।” বিষয়টিকে নেহাতই দু’পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বলে ব্যাখ্যা করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি কালাম মণ্ডল।
এ দিনই বাঁকুড়ার পাত্রসায়র কলেজে মনোনয়পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট, বোমাবাজির জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। দলের ব্লক নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের রেশ পড়েছে ছাত্র সংগঠনেও। পাত্রসায়র কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়নই তুলতে পারেনি। কিন্তু শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের দু’টি গোষ্ঠীই পৃথক পৃথক ভাবে ১২টি আসনের জন্য শনিবার ৭০টি মনোনয়নপত্র তুলেছিল! দ্বন্দ্ব এতটাই।
এ দিন মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে কলেজের সামনে গণ্ডগোল বাধে সেই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদেরই। অভিযোগ, কলেজের মধ্যেই কিছু বহিরাগত লাঠি, রড হাতে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া প্রার্থীদের মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে বহিরাগতদের বাইরে বের করে দেয়। বেলা ১২টা নাগাদ ফের কলেজ গেটের সামনেই দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট শুরু হয়। মনোনয়নপত্র তুলতে এসে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে মারপিট হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বীরভূমে একটি মাত্র কলেজেই মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল কোনও বিরোধী ছাত্র সংগঠন। এসএফআই-এর তোলা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার দিনভর উত্তপ্ত থাকল বীরভূমের মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লেপসা হেমব্রম কলেজ। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে কলেজের ভেতরে-বাইরে বারবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাধার মুখে পড়ে এসএফআই। কলেজের অদূরে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় সিপিএমের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদককে। পরিস্থিতি সামলাতে এক সময়ে বাইরে মোতায়েন পুলিশকে কলেজের ভেতরে ডাকেন অধ্যক্ষ। শেষমেশ পুলিশি নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নেই নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে এসএফআই। গত বছর ওই কলেজেই মনোনয়ন জমাকে ঘিরে ধুন্ধুমার বেঁধেছিল। সে বার এসএফআই মনোনয়নপত্র তুলতে পারলেও তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বাধায় তা জমা করতে পারেনি। এ বারও মনোনয়নপত্র জমার দিন গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকায় প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ-প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy