প্রতিবাদ-কথা: দুপুর ১২:৫৫ : মঞ্চে তখন তৃণমূল নেতারা। হাজির কর্মী-সমর্থকরাও। বিকেল ৪:০৬ : বেলা গড়াতেই সুনসান ধর্নামঞ্চ। রবিবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
দাদার জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া সৈনিকেরা উধাও দ্বিতীয় দিন থেকেই!
মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিবিআইয়ের হাতে মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দিনের পর দিন আন্দোলন আরও জোরদার হবে। শনিবার থেকেই শুরু হয়েছিল ভবানীপুর মাঠে গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান-বিক্ষোভ। বেরিয়েছিল প্রতিবাদ মিছিল। অবস্থান-মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই সেই ধর্নায় উৎসাহ মিইয়ে গেল!
সকালের দিকে কিছু সময় বাদ দিলে রবিবার বাকি দিনটা ধর্নামঞ্চ প্রায় মাছি তাড়িয়েছে! বিদেশ বসু, রঘু নন্দীর মতো ফুটবল ব্যক্তিত্বদের বাদ দিলে বিশেষ পরিচিত ক্রীড়া জগতের তেমন কোনও মুখ এ দিন চোখে পড়েনি। তৃণমূলের তরফে এ দিনের ধর্নার দায়িত্ব ছিল হাওড়া ও হুগলি জেলার উপরে। হাওড়া জেলার তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী অরূপ রায় এবং হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী কিছু সময়ের জন্য ধর্নামঞ্চে এসেছিলেন। কিন্তু ধর্না-অবস্থান যে প্রায় ফ্লপ, একান্ত আলোচনায় তা অস্বীকার করছেন না তৃণমূল নেতারাও।
ফ্লপ হলেও শো অবশ্য চালু থাকবে! তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ তেমনই। ধর্নামঞ্চ থেকে পার্ক স্ট্রিট ঘুরে আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবাদ মিছিলেরও পরিকল্পনা আছে আজ, সোমবার। শাসক দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ধর্না-প্রতিবাদ এখন চালু থাকবে। কলকাতায় সোমবার মিছিল হবে, দিল্লিতে সাংসদেরা সরব হবেন।”
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এ দিন ধর্নামঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হলেও নিচে শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নিতান্তই সামান্য। যদিও পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ১০০০-১২০০ লোক উপস্থিত ছিল। তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের দাবি, সকাল ১০টা থেকে বেলা দু’টো পর্যন্ত ধর্না চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছিল। তখন হাজির ছিলেন শ’তিনেক ক্রীড়াবিদ। কিন্তু বেলা দু’টো নাগাদ আরও কয়েক জন ক্রীড়াবিদ চলে আসায় বিকেল পর্যন্ত ধর্না চালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু মঞ্চে থাকা এক ক্রীড়াবিদই আবার জানাচ্ছেন, ১৪-১৫ জনের বেশি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আসেননি।
দুপুর দু’টো নাগাদ মূল অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর থেকেই মঞ্চে ভিড় আরও কমে আসে। দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। মঞ্চে তখন বসে সাকুল্যে ২৮ জন। তৃণমূলের দাবি, এঁরা সকলেই ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত। মঞ্চের নীচে তখন বসে শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ আরও কয়েক জন নেতা-কর্মী।
বিকেল চারটে নাগাদ ধর্না-মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেলেন শঙ্কুও। মঞ্চে তখন বসে ঠিক ১৭ জন! সাড়ে চারটে বাজার একটু আগে কয়েক জন চিত্রসাংবাদিক ধর্না-আন্দোলনের ছবি তুলতে আসছেন দেখে মঞ্চে উঠেছিলেন আরও কয়েক জন। উপস্থিতি তখন বেড়ে হল ২৪! মঞ্চের নিচে তখন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ এবং রতন দে-সহ উপস্থিত জনাদশেক তৃণমূল কর্মী। শেষ পর্যন্ত ৪টে ৩৫ মিনিটে এ দিনের মতো ধর্নায় ইতি।
কেন লোকসংখ্যা কমে গেল এ দিন? তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, রবিবার বলে অনেককেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছে। তবে আজ থেকে তাঁরা ফের দ্বিগুণ উৎসাহে নেমে পড়বেন। তৃণমূলেরই একাংশ আবার বলছে, মদনের অনুপস্থিতিতে ক্রীড়া মহল নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছেন যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাই ভিড়ের ‘নৈতিক দায়িত্ব’ নাকি তাঁরই! মদন গ্রেফতারির পরে সোশ্যাল সাইটেও এখন কোণঠাসা তৃণমূল। অনলাইনেই তার জবাব দেওয়ার বদলে এ দিন পথে নামার জন্য ডাক দেওয়া হয়েছিল ফেসবুক বন্ধুদের। কিন্তু ৬০-৭০ জনের বেশি বন্ধু জোটেনি। শীতের পড়ন্ত বিকেলে মরে আসা আলোয় কমে আসা লোক সম্বল করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেছে ‘ফাড্ডা’ নামক মমতার ফেসবুক বন্ধুদের সংগঠন। মিছিলকারীদের মধ্যে ছিল কেজি টু-র ছাত্রী হিয়া নাইয়াও! মহেশতলার বাসিন্দা ওই শিশুর সঙ্গে ছিলেন তার বাবা। যিনি নাম জিজ্ঞাসা করায় এড়িয়ে গিয়েছেন আত্মপরিচয়। মিছিলে ছিলেন পরিচিত রাজনৈতিক মুখ তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা প্রমুখ। মিছিল শেষে বৈশ্বানর বলেন, “প্রফুল্ল সেন, অতুল্য ঘোষ, ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধীকে নিয়ে কত কথাই বলা হয়েছে। কিছুই প্রমাণ করা যায়নি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy