কথিত আছে, বই-ই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। পৃথিবীতে বইপ্রেমী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আর বিভিন্ন বিষয়ে হরেকরকম বইয়ের ঠিকানা মানেই গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চালু হয়েছে নতুন পাঠক্রম। বিষয়গুলির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে চাকরির বাজারেও এই ক্ষেত্রের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই পড়ুয়াদের কথা ভেবে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চালু হতে চলেছে একটি পেশাদারি কোর্স। কোর্সে ভর্তির জন্য ইতিমধ্যেই অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যে কোর্স করানো হবে, সেটির নাম— ‘অ্যাডভান্সড ইন্টার্নশিপ অন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (এলআইএস) প্রফেশনালিজ়ম’। কোর্স আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগ এবং লাইব্রেরি বিভাগ। ইন্টার্নশিপের এই কোর্সটির মেয়াদ মাত্র তিন মাস। যা শুরু হবে ২ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং সংশ্লিষ্ট কোর্সের যুগ্ম আহ্বায়ক বর্ণালি রায়চৌধুরী বলেন, “এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ইন্টার্নশিপ কোর্সটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে পড়ুয়াদের মধ্যে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ এবং কর্মক্ষেত্রে এই বিষয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঠক্রমটি পুনর্বার চালু করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পেশাদারি ক্ষেত্রে প্রবেশের আগেই পড়ুয়াদের কর্মদক্ষ করে তোলা।”

তবে এই কোর্স অনলাইনে নয়, অফলাইনেই সম্পন্ন হবে। ক্লাস হবে কল্যাণীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক ক্যাম্পাসে। এর কারণ হিসাবে বর্ণালি জানান, কোর্সটি যে হেতু কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য করানো হবে, তাই ক্লাসে শুধু থিয়োরি বা তত্ত্ব পড়ানো হবে না। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে হাতেকলমে। এমনকি পড়ুয়াদের ফিল্ড ভিজ়িটেও নিয়ে যাওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে কোনও বিষয়ের প্রথাগত কোর্সে শুধু বিভিন্ন গতে বাঁধা জিনিস পড়ানো হয়। কিন্তু শেষমেশ চাকরিক্ষেত্রে সেই জ্ঞান খুব বেশি কাজে লাগে না। এই ইন্টার্নশিপ কোর্সের ক্ষেত্রে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তত্ত্ব পড়ানো হবে। পড়াবেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ ছাড়াও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। কারণ ৩০ মিনিটের তত্ত্বনির্ভর বিষয়গুলির ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য তিন ঘণ্টার প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস জরুরি।”

হাতেকলমে প্রশিক্ষণের জন্য কী কী করা হবে? বর্ণালি জানিয়েছেন, গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বিভাগের ‘রেজিস্টার’ ব্যবহার করা, ‘অ্যাকুইজ়িশন’, ‘ক্যাটালগিং’, ‘অডিট’-সহ নানাবিধ কাজ শেখানো হবে। একই সঙ্গে যে হেতু এখন প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য বহু কাজই সম্পন্ন হয় অনলাইনে, তাই পড়ুয়াদের বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার, ডিজিটাল রেকর্ড, লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাঁদের ফিল্ড ভিজ়িটের জন্য বিভিন্ন জাতীয় গ্রন্থাগার বা আর্কাইভে (এশিয়াটিক সোসাইটি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মিউজ়িয়াম ইত্যাদি) নিয়ে যাওয়া হবে যাতে তাঁরা সেখানকার কার্যপ্রক্রিয়ার বিষয়ে একটা ধারণা তৈরি করতে পারে।

আবেদনকারীদের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে কোনও সার্টিফিকেট কোর্স অর্জন করতে হবে। যাঁরা ব্যাচেলর অফ লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (বিএলআইএস) উত্তীর্ণ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চান, তাঁরাও এই ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ইন্টার্নশিপের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও প্লেসমেন্টের আয়োজন করা হবে না। তবে চাকরির পরিসর আরও অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু কোথায়, কী ধরনের চাকরির সুযোগ মিলতে পারে? বর্ণালির কথায়, “বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরিয়ান বা লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরির পাশাপাশি ডকুমেন্টেশন অফিসার পদে চাকরির সুযোগ মিলতে পারে পড়ুয়াদের। অর্থাৎ পাবলিক লাইব্রেরি থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিআরডিও এমনকি নাসার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।”

তাই আগ্রহীরা লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিষয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে এই কোর্সে ভর্তির আবেদন জানাতে পারবেন। কোর্স ফি হিসাবে জমা দিতে হবে ১০০০ টাকা। আগামী ৩০ নভেম্বর আবেদনের শেষ দিন।