Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
পুরভোট

দলের বাইরের জনপ্রিয় মুখও টানছে সিপিএম

শুধু দলের পরিচয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকলে ফল মিলছে না। পুরভোটে মানুষের মন পেতে তাই দলের বাইরে ‘জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের প্রার্থী করার উপরে বেশি জোর দিচ্ছে সিপিএম। এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, দলের সদস্য না হলেও এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করার সময় বেছে নেওয়া হবে।

প্রসূন আচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

শুধু দলের পরিচয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকলে ফল মিলছে না। পুরভোটে মানুষের মন পেতে তাই দলের বাইরে ‘জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের প্রার্থী করার উপরে বেশি জোর দিচ্ছে সিপিএম। এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, দলের সদস্য না হলেও এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করার সময় বেছে নেওয়া হবে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “প্রার্থী করার ক্ষেত্রে পার্টির সদস্যপদ না দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।” আলিমুদ্দিনে পুরভোট সংক্রান্ত বৈঠকে জেলার নেতাদেরও এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সময়েও দলের বাইরের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের অনেক সময়েই প্রার্থী করেছে সিপিএম। কিন্তু সেটা ছিল ব্যতিক্রম। সাধারণত কোনও ওয়ার্ডে যোগ্য দলীয় প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই ধরনের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হতো। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। যে ভাবে বামেদের পিছনে ফেলে বিজেপি ক্রমেই দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে উঠে আসছে, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে আলিমুদ্দিন।

এপ্রিল-মে মাসে কলকাতা-সহ ৯৩টি পুরসভায় ভোট। যদি দেখা যায়, সামগ্রিক ভাবেই বিজেপি দ্বিতীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তা হলে সিপিএম আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়েই বাম ভোট ধরে রাখতে দলের বাইরের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। যাতে প্রার্থীদের পরিচয়ের জোরে দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকে। দলের রাজ্য সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবের কথায়, “অতীতে আমরা এই ধরনের প্রার্থী কম দিতাম। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বার এই ধরনের প্রার্থী বেশি করে দেওয়া হবে।”

রাজ্যে যে ৯৩টি পুরসভায় ভোট, তার মধ্যে শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই রয়েছে ২৫টি। বিধাননগর ও রাজারহাট মিলে যদি পুর-নিগম হয়, তা হলেও ২৪টি পুরসভায় ভোট হবে। জেলার পুরভোটের দায়িত্বে থাকা রাজ্য কমিটির সদস্য নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেন, “এমন প্রার্থী দিতে চাই, যাতে মানুষ মনে করেন, যোগ্য ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা হয়েছে। পার্টি করেন বলেই তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি।” দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “গত ক’বছরে বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে বহু সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে এসেছেন। যেমন অম্বিকেশ মহাপাত্র বা কামদুনির প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। এলাকাতেও এমন অনেক মানুষ আছেন। তাঁদের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।”

পুরভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা বামফ্রন্ট আলোচনা করেছে। অন্য দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেছে সিপিএম। সেই বৈঠকেই গৌতম দেব, রবীন দেবের মতো নেতারা শরিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের ১২টি পুরসভায় ভোট। উত্তরবঙ্গের নেতা অশোক ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন, এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করার ব্যাপারে অনেকেই মত দিয়েছেন।

বামেদেরই একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, এর ফলে ভোটবাক্সে ভাঙন কি আদৌ বন্ধ হবে? কারণ ভোট হয় দলীয় প্রতীকে। দ্বিতীয় প্রশ্ন, বামেদের এই ‘পড়তির বাজারে’ এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিরা সিপিএমের প্রতীকে দাঁড়াতে রাজি হবেন কেন? আর যদি রাজি হন, জেতার পরে তিনি বামেদের দিকেই থাকবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়? কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শরিক নেতারা উদাহরণ টেনে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে হলদিয়া, কামারহাটি, এমনকী কলকাতা সিপিএম কাউন্সিলরও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, সেখানে এই ধরনের প্রার্থীদের উপরে ভরসা কতটা? সিপিএম নেতারা পাল্টা বলেছেন, কেউ যদি ভয়ে, বাধ্য হয়ে বা স্বেচ্ছায় দলত্যাগ করেন, তা বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। তাই ভোটের শতাংশের কথা মাথায় রেখে ঝুঁকি নিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

municipal election prasun acharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE