বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের ১৪ দিনের মাথায় কোরপান শাহ খুনের মামলায় কিছুটা এগোল লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার ওই ঘটনায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চার হবু চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম জাভেদ আখতার, অনুরাগ সরকার, ইউসুফ জামাল ও অরিজিৎ মণ্ডল। জাভেদ, অনুরাগ ও অরিজিৎ তৃতীয় বর্ষের এবং ইউসুফ চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। আজ, মঙ্গলবার তাঁদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হবে। কোরপানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এই নিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করা হল।
পুলিশি সূত্রের খবর, জাভেদের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়। অনুরাগের বাড়ি জলপাইগুড়িতে, ইউসুফের মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জে এবং অরিজিতের বাড়ি বাঁকুড়ার খাতড়ায়। একটি মোবাইল লোপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ নভেম্বর নীলরতনের ছাত্রাবাসে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপানকে। সেই ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রথম বর্ষের এক মেডিক্যাল ছাত্র এবং ওই ছাত্রাবাসের দুই ক্যান্টিন-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। লালবাজারের খবর, জেরায় প্রথম বর্ষের সেই ছাত্র এবং ক্যান্টিন-কর্মীরা কোরপানকে মারধরের ঘটনায় জনা দশেক হবু চিকিৎসক জড়িত বলে জানান এবং তাঁদের নামও বলে দেন। “সেই হিসেবে এখনও ছ’জন অভিযুক্ত ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধরা বাকি,” বললেন লালবাজারের এক কর্তা।
পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছেন, এই ছাত্রদের নাম অনেক আগেই জেনেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু শাসক দলের স্বাস্থ্য সেল এবং ওই মেডিক্যাল কলেজের কর্তাদের চাপে গোয়েন্দারা কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে সিট গঠন করেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি ছিল না। রবিবার কোরপানের ভাই রওশন বলেন, “তদন্ত ধামাচাপা দিতেই সিট গড়া হয়েছে।” রওশনের সেই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এ-সব দেখেই প্রশ্ন ওঠে, তদন্ত ধামাচাপা দিতেই কি সিট গড়ার ছক?
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ দিন সকালেই তদন্তকারী অফিসারদের ফোন করেন কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। তিনি অভিযুক্ত ছাত্রদের তড়িঘড়ি গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন অফিসারদের। দুপুরেই লালবাজারের হোমিসাইড শাখায় ডেকে পাঠানো হয় চার অভিযুক্তকে। তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে বেসামাল হয়ে পড়েন ওই ছাত্রেরা। তাঁরা অপরাধ কবুল করে নেন বলেও লালবাজার সূত্রের দাবি।
যদিও বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা সরকারি ভাবে এ দিনের নির্দেশ দেওয়ার কথা মানতে চাননি। তাঁরা বলেন, “ওই ছাত্রদের গ্রেফতারের জন্য কিছু প্রমাণের দরকার ছিল। এ দিনই তা হাতে এসেছে।” তবে সেই প্রমাণের বিবরণ দেননি কর্তারা।
জেরার মুখে ধৃতেরা কোরপান-হত্যার কিছু বিবরণও দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়। ওই পড়ুয়ারা জানান, দু’দফায় কোরপানকে মারধর করা হয়েছিল। মারতে মারতে প্রায় হস্টেলের চারতলা ঘোরানো হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। তার পরে থামের সঙ্গে বেঁধে ফের মারধর শুরু হয়। মারের চোটে জ্ঞান হারান কোরপান। তখনই সিনিয়র পড়ুয়ারা দল বেঁধে পরিকল্পনা করে থানায় ফোন করেন। ঠিক হয়েছিল, পুলিশের সামনে কথা বলা হবে একই সুরে। একই নির্দেশ গিয়েছিল ক্যান্টিন-কর্মীদের কাছেও। কিন্তু গ্রেফতারের পরে ডাক্তারি পড়ুয়া জসিমুদ্দিন লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে সব বলে ফেলাতেই সেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy