লোকসভা নির্বাচনে জোটের সম্ভাবনা আজ খারিজ করে দিতে চাইল কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় শিবিরই। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ বলেন, “জোটের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই। কংগ্রেসকে দুর্বল করতে কোনও কোনও মহল থেকে এই জল্পনা ছড়ানো হচ্ছে।” জোটের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ও এ দিন বলেন, “আমার কাছে কোনও খবর নেই যে জোট হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল একাই লড়বে লোকসভা ভোটে।
কোনও সমীক্ষাতেই ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত না-পাওয়া কংগ্রেস এখন গোটা দেশে মরিয়া হয়ে শরিক খুঁজছে। তারই মধ্যে অধীর আজ ঘোষণা করেন, পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনেই কংগ্রেস এ বার প্রার্থী দেবে। যদিও সনিয়া গাঁধীকে এ দিন তিনি মোট ১৭ জনের নামের তালিকা দিয়ে এসেছেন চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। গত বার তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেধে কংগ্রেস যতগুলি আসনে লড়েছিল, সংখ্যাটা তার চেয়ে মাত্র ৩ বেশি। এটিকে প্রথম দফার তালিকা বলা হলেও, এটা বেশ স্পষ্ট যে রাজ্যের এলাকা ধরে ধরে এই তালিকা তৈরি করা হয়নি। বরং দলের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে সব চেয়ে সম্ভাবনাময় বলে যাঁদের মনে করা হয়েছে, তাঁদের নামই রয়েছে এতে। তালিকায় বয়েছে দলের বর্তমান ৬ সাংসদ, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন ও রাজ্যে দলের প্রথম সারির নেতা-বিধায়কদের নাম। অধীরের কথায়, “প্রথম দফায় ১৭টি আসনের জন্য কংগ্রেসের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সনিয়া গাঁধীর কাছে একটি তালিকা আজ পেশ করেছি। তাঁর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, অধীরবাবুর দেওয়া তালিকায় দলের বর্তমান ৬ সাংসদের কারও আসন পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। আজহারউদ্দিনকে কৃষ্ণনগর, বসিরহাট, হাওড়া ও উলুবেড়িয়ার মধ্যে কোনও একটিতে প্রার্থী করা যেতে পারে বলে সনিয়াকে জানিয়েছেন অধীরবাবু। ওই চারটি আসন ধরে ধরে আজহারকে প্রার্থী করার সুবিধা ও অসুবিধার দিকগুলিও যুক্তি-সহ সবিস্তার জানিয়েছেন তিনি।
বিজেপি কাল পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১৭ জন প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। বোঝা যাচ্ছে, তার পর কংগ্রেসও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে দেরি করতে চাইছে না। তবে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন নিশানা করেন তৃণমূলকেই। বলেন, “তৃণমূল যে ভাবে হম্বিতম্বি করছে, সেই তুলনায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নিয়ে তৎপর নয়। বোঝা যাচ্ছে ওঁদের মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে।” অধীরবাবুর সঙ্গে এ দিন কথা বলার পরে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়াও বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। বিনা লড়াইয়ে একটুও জমি ছাড়া হবে না।”
কংগ্রেসের ওই কটাক্ষে আমল না দিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “তৃণমূল যথা সময়েই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।” জোটের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে একা লড়েছি। সাম্প্রদায়িক বিজেপি বা কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা নেই। একা আছি। ভাল আছি।” জোট প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “জোট যে হবে না তা আমরা আগেই জানিয়ে দিয়েছি। জাতীয় স্তরে অণ্ণা হজারের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে ভাবে জোটের জল্পনা ছড়ানো হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে কিছু স্বার্থান্বেষী শক্তি এর পিছনে রয়েছে।”
মমতা-মুকুল উভয়েরই বক্তব্য, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি-সহ কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল যখন জাতীয় স্তরে বিকল্প মঞ্চ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন জোটের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে সেই বিরোধিতা লঘু হয়ে যাবে বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের মত। বরং তাঁরা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে তৈরি। রাজনীতির অনেকেই আবার এই সব সহজ সূত্র মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছুই হয় না। বিশেষ করে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেখানে হন্যে হয়ে শরিক খুঁজছেন। তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো ইউপিএ-র প্রাক্তনীদের কাছে টানতে চাইছেন। যাতে রামবিলাস পাসোয়ানের বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর ক্ষত নিরাময় করা যায়। তাঁদের আরও বক্তব্য, জোট হলে তৃণমূলেরও আসন বাড়বে অনায়াসে।
এই অবস্থায় তৃণমূলের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে কিছু নেতা সম্প্রতি মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা মমতাকে বলেন, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল ১৪টি আসন ছেড়েছিল কংগ্রেসকে। এ বার সেই সংখ্যক বা ১৫টির মতো আসন ছাড়া হলে কংগ্রেস জোটে রাজি। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি তৃণমূল। রাজনীতিকদের মতে, ১৪টির পরিবর্তে তৃণমূল যদি ১০টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়ে, তা হলেও শেষ মুহূর্তে জোট হয়ে যেতে পারে। তবে আজ অন্তত প্রকাশ্যে উভয় শিবিরই জোট-সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy