শিল্প নিয়ে নতুন নীতিতে এ বার বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে শিল্প পার্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
ক্রেতার অভাবে রাজ্য সরকারের নিজস্ব শিল্প পার্কগুলির বহু জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ওই সব পার্কে যে সব সংস্থা আগে জমি নিয়েছে, তাদের অনেকে এখনও শিল্প গড়ায় হাতই দেয়নি। নবান্ন সূত্রের খবর, শিল্পের এই বেহাল দশার মধ্যে বিনিয়োগ টানার নতুন কৌশল হিসেবেই বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে শিল্পপার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন এই নীতি গৃহীত হয়েছে।
কী বলা হয়েছে তাতে? নবান্নের এক কর্তার কথায়, “জমির ব্যবস্থা থেকে শিল্পের পরিকাঠামো নির্মাণ, এমনকী শিল্প গড়ার লোক ধরে আনা সবই বেসরকারি সংস্থার দায়িত্ব। সরকার কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।”
নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, হাতে ন্যূনতম ২০ একর জমি এবং সেই জমিতে অন্তত ২০টি শিল্প ইউনিট নিয়ে কোনও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে সরকার তাকে শিল্প পার্ক গড়ার অনুমতি দেবে। তবে ওই শিল্প পার্কের জমি উন্নত করা, রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা করা, নিকাশি, টেলি যোগাযোগ, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা এবং কঠিন বর্জ্য ফেলার যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে আবেদনকারীকেই।
নবান্নের ওই কর্তার কথায়, নতুন সরকারি নীতির মূল মন্ত্র ঠিক হয়েছে অল্প জমিতে বেশি শিল্প ইউনিট। তিনি বলেন, “যত বেশি শিল্প ইউনিট হবে, তত বেশি কর্মসংস্থান ও পুঁজি লগ্নি হবে। তাতে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। তাই এই শিল্প পার্ক শুধু মাঝারি ও ছোট শিল্পের জন্য।” শিল্প পার্ক গড়তে এলে সরকার কিছু আর্থিক সুবিধা দেবে। পার্কে ১০ একর জমি পিছু এই সুবিধার পরিমাণ হবে ১ কোটি টাকা।
কিন্তু পার্কের সব জমিতে যে শুধুমাত্র শিল্প ইউনিটই করা হবে, আবাসন গড়ে বিক্রি করা হবে না এমন নিশ্চয়তা কোথায়? ওই কর্তার দাবি, পার্কের সব জমিতে শিল্প না হলেও তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে অন্য কিছু হতে পারে। যেমন, কোনও ‘কমন ফেসিলিটি বিল্ডিং’, শ্রমিক-কর্মীদের আবাসন ইত্যাদি। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনও ভাবেই পার্কের জমিতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।
তবে সরকারের এই নতুন নীতি কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে বণিক মহলের আশঙ্কা কাটছে না। তাদের মতে, বড় শিল্প না হলে বিনিয়োগ আসবে না। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে বড় শিল্প তৈরির কোনও উদ্যোগ নেই। কেউ কেউ বলছেন, বেসরকারি উদ্যোগীরা এ রাজ্যে কেন শিল্প পার্ক তৈরি করতে আসবেন? কোনও সংস্থাকে ন্যূনতম ২০ একর জমি কিনতে হলে একাধিক জমি মালিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এর সুযোগ নিয়ে দালালরা ছড়ি ঘোরাবে। এর পর পার্কে জল-রাস্তা-আলোর মতো পরিকাঠামো তৈরি করতে গেলে পড়তে হবে সিন্ডিকেটের খপ্পরে। তার অর্থ, জেনেশুনে বেশি দাম দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী কিনতে হবে তাদের থেকে। এর পরেও যদি পার্ক তৈরি হয়, তা হলে সরকারের নিয়ম মেনে সেখানে অন্তত ২০টি শিল্প ইউনিট নির্মাণের পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। তার মানে, আবার সিন্ডিকেটের চক্করে পড়া। এর সঙ্গে রয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের দাদাগিরি।
সরকারের হাতে ২৩টি শিল্প পার্ক রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধীনে রয়েছে গোটা ১৫ গ্রোথ সেন্টারও। শিল্প পার্কের প্রায় তিন হাজার একর জমি খালি পড়ে। অনেকে জমি নিয়েও কিছু করেননি। গ্রোথ সেন্টারে জমি ফাঁকা না থাকলেও বহু ইউনিট বন্ধ। এই অবস্থায় নতুন নীতিতে বেসরকারি শিল্প পার্ক হলেও তা কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই রীতিমতো সংশয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy