বেনজিন নেশা খাতুন। নবম শ্রেণি, গোঠা হাইস্কুল, মুর্শিদাবাদ
বহু দিন পর স্কুলে এলাম। খুশি তো বটেই। তবে আশঙ্কাও নেই, তা নয়। মা স্কুলে আসার সময় কিছু খাবারও করে দিয়েছেন। সেটাই খেয়েছি দুপুরে এক সময়। মা বার বার করে বলে দিয়েছেন, স্কুলে মাস্ক না খুলতে। বাইরের খাবার না খেতে। এক গাদা বিধি নিষেধ মেনেই স্কুল করেছি।
বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস আজ সব ক্লাসই হয়েছে। শিক্ষকদের অনেককেই দেখলাম। খুব ভাল লাগল। দু’এক জন স্কুল থেকে চলেও গিয়েছেন। অনলাইন ক্লাসের কোনও ব্যবস্থা স্কুলে ছিল না। আর থাকলেও বড় মোবাইল না থাকায় করার উপায়ও ছিল না। বাড়িতে থাকলেও প্রথম দিকে পড়াশোনা করতে পারিনি। বাড়িতে খিল এঁটে বসে থাকা ‘এই বুঝি করোনায় ধরল।’ এমনকি বাড়ি থেকেও বেরোতে দেওয়া হত না। করোনা সংক্রমণ একটু কমলে গৃহশিক্ষকের কাছে যাওয়া
শুরু করেছিলাম। তখনই যে-টুকু পড়াশোনা হয়েছে।
বাবা করোনার মধ্যেও কেরলে গিয়েছে কাজে। মা বিড়ি শ্রমিক। আমিও অবসরে বিড়ি বাঁধি। দিদি কলেজে পড়ে, সেও বাড়িতে বিড়ি বাঁধে। এক ভাই, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এই স্কুলেরই। তার ক্লাস এখনও খোলেনি। শ্যামপুরে বাড়ি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা স্কুলের। সাইকেলেই আসি। বহু দিন পর এ ভাবে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে এলাম। কিন্তু বন্ধুদের বেশির ভাগই আসেনি এ দিন। অনেকে হয়ত জানেও
না খবরটা।
তাই স্কুল খুললেও সেই হই-হুল্লোড় করে খেলাধুলো, বন্ধুদের সঙ্গে টিফিনে আড্ডা সে সব ফিরবে কবে, জানি না। এই ক’জন ছাত্রছাত্রী? এত বড় স্কুল যেন খাঁ খাঁ করছে। একটা বেঞ্চে এক জন। অথচ আগে বেঞ্চে ক’জন বসবে তাই নিয়ে কত না ঝগড়া হয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে। এখন দূরে দূরে থাকা। মুখে মাস্ক বাঁধা। কাউকেই যেন চিনতে পারছি না। স্কুলের সেই চেনা ছবিটাই যেন বদলে গিয়েছে। স্কুলে এলেও সবাই চুপচাপ। হুল্লোড় নেই। চিৎকার নেই। অপেক্ষায় আছি, বন্ধুদের গলা জড়িয়ে ধরে গল্প, হাসি ঠাট্টার সেই স্কুল জীবনে ফেরার জন্য।
বেনজিন নেশা খাতুন
নবম শ্রেণি, গোঠা হাইস্কুল, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy