Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
শিবপুর মৌজায় বিক্ষোভ

শ্রমিকদের ঘর ভাঙচুর, বন্ধ ‘গীতবিতান’ গড়ার কাজ

ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিলই। এ বার ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের নির্মীয়মাণ অস্থায়ী বাড়িতে ভাঙচুর হল। সীমানা-প্রাচীর গড়ায় পড়ল বাধা। অভিযোগ, এ ভাবেই সোমবার বোলপুরের শিবপুর মৌজায় প্রস্তাবিত ‘গীতবিতান’ থিম-সিটি তৈরির কাজ বন্ধ করে দিলেন ক্ষতিগ্রস্ত জমিদাতাদের একাংশ। অধিগৃহীত জমিতে বসে পড়ে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভও করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২০
Share: Save:

ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিলই। এ বার ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের নির্মীয়মাণ অস্থায়ী বাড়িতে ভাঙচুর হল। সীমানা-প্রাচীর গড়ায় পড়ল বাধা। অভিযোগ, এ ভাবেই সোমবার বোলপুরের শিবপুর মৌজায় প্রস্তাবিত ‘গীতবিতান’ থিম-সিটি তৈরির কাজ বন্ধ করে দিলেন ক্ষতিগ্রস্ত জমিদাতাদের একাংশ। অধিগৃহীত জমিতে বসে পড়ে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভও করেন।

শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে আবাসন নয়, গড়তে হবে শিল্পই— এই দাবিতেই তাঁদের আন্দোলন বলে দাবি ওই জমিদাতাদের। সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলার রায়ের পরে, গত সেপ্টেম্বরেও একই দাবিতে ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন তাঁরা। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জমিদাতা চাষি ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এসডিও (‌‌বোলপুর) শম্পা হাজরা এবং এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ। প্রশাসনের সঙ্গে কথাবার্তার পরে সাময়িক ভাবে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা। আজ, মঙ্গলবার শিবপুরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ‘শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ’ সভাপতি তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের।

শিবপুরে শিল্প-তালুক গড়বে জানিয়ে ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ একর জমি নেয় রাজ্য সরকার। তখন অনেকে জমি দিলেও, জমির দাম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক নেননি শ’খানেক চাষি৷ রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে অবশ্য কেউ শিল্প গড়েনি৷ শিল্পস্থাপন এবং জমির বর্ধিত দামের দাবিতে বাম আমলেই শুরু হয় আন্দোলন। ‘শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন কৃষি-জমি বাঁচাও কমিটি’ ২০০৯ সালে পুলিশের সামনে ওই জমিতে ধান পুঁতে দেয়।

রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে, ২০১২ সালের মার্চে কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবিদাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই বছরই জুলাইতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে গিয়ে অধিগৃহীত জমিতে আইটি-হাবের শিলান্যাস করেন। গত বছরের শেষে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন— শিবপুরের জমিতে আবাসন গড়বে সরকার।

প্রশাসন জানিয়েছে, ১৩১ একর জমিতে ‘স্মার্ট সিটি’ (গীতবিতান), ৫০ একরে ‘বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার’ (কুটির শিল্পের জন্য), ১০ একরে আইটি-হাব গড়া হবে। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ‘গীতবিতান’-এর জন্য চিহ্নিত জমি ঘুরে দেখে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা প়ঞ্চাশ আন্দোলনকারী প্রকল্প-এলাকায় ঢুকেই জমি ঘেরার
কাজে বাধা দেন। ভেঙে দেওয়া হয় শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ঘর। তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়ান ঠিকাদার শান্তনু মজুমদার। কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। জমিদাতা তথা স্থানীয় সাবিরগঞ্জ, কাশীপুর, ডাঙাপাড়া, ঘেরোপাড়া, চাঁদপাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ শেখ, হাসিবুদ্দিন খান, বুড়ো খাঁ, লক্ষ্মণ মাড্ডিদের বক্তব্য, ‘‘শিল্পের জন্য সরকার জমি নিয়েছিল। ন্যায্য ক্ষতিপূরণও দেয়নি। অথচ, এখন এখানে শিল্প না গড়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করার কথা বলা হচ্ছে। এটা হতে পারে না।’’ তাঁদের দাবি, বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে শিল্প গড়ুক সরকার, নয় জমি ফেরত দিক।

ফোন এবং এসএমএস করেও এ দিন বক্তব্য জানা যায়নি দেবাশিসবাবুর। নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ঘটনার খবর এখনও আসেনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ যদিও জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে সমাধান-সূত্র বেরোবে বলে আশাবাদী মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তবে তাঁর অভিযোগ, “ওই প্রকল্প বন্ধ করতে বহিরাগতদের উস্কানি রয়েছে। এত দিন জমিটা খালিই পড়েছিল। সরকার উদ্যোগী হয়ে কিছু করছে, তা অনেকের সহ্য হচ্ছে না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shivpur Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE