ফাইল চিত্র।
তদন্ত চালানোর নির্দেশ পাওয়ার পরে আড়াই মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু যাঁর অভিযোগ এবং যাঁর তোলা ছবি ঘিরে এত বিতর্ক, নারদ নিউজের সেই কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলকে সিবিআই এখনও জেরা করল না কেন, তা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।
নারদ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের পাল্টা মামলার শুনানিতে বিচারপতি বাগচী মঙ্গলবার সিবিআই-কে বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিরা নিজেরা কি আদৌ টাকা চেয়েছিলেন? নাকি ম্যাথু নিজে থেকে তাঁদের টাকা দিতে গিয়েছিলেন?’’ ম্যাথু নিজে টাকা দিতে গিয়ে থাকলে মামলার গতিপ্রকৃতি আলাদা হবে বলে জানান তিনি।
এ বছরেরই ১৭ মার্চ নারদ-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই-কে তদন্ত করার নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। প্রাথমিক তদন্তের পরে এফআইআর করে সিবিআই অনুসন্ধান চালিয়ে গেলেও তাদের কাজকর্ম নিয়ে ঢিলেমির অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
ম্যাথুকে এখনও জেরা না-করার কারণ জানতে চেয়ে বিচারপতি বাগচী এ দিন যে-প্রশ্ন তোলেন, তাতেও সেই ঢিলেমির অভিযোগই প্রচ্ছন্ন রয়েছে বলে আইনজীবী মহলের পর্যবেক্ষণ।
স্টিং অপারেশনে টাকা নেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনই তৃণমূলের নেতানেত্রী। তাঁদের মধ্যে ছ’জন সাংসদ, চার জন রাজ্যের মন্ত্রী, এক জন প্রাক্তন মন্ত্রী, এক জন বিধায়ক ও ডেপুটি মেয়র। রয়েছেন এক জন আইপিএস অফিসারও। সিবিআই এফআইআর করার পরে অভিযুক্ত অপরূপা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করেন। এ দিন আইনজীবীদের কর্মবিরতির মধ্যেই সেই মামলার শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই বিচারপতি বাগচী বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন সিবিআই-কে। অস্বস্তিতে পড়ে যান সিবিআইয়ের কৌঁসুলি। বিচারপতি জানতে চান, ম্যাথুর বয়ান এখনও নথিভুক্ত করা হয়নি কেন। সিবিআইয়ের যুক্তি, এর মধ্যে কয়েক বার ম্যাথুর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তবে তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়নি। বয়ান নথিভুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে ম্যাথুকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার দরুন তিনি এখনও আসতে পারেননি। এ দিন সিবিআই আট পাতার একটি নথিও জমা দেয় আদালতে।
২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে কলকাতায় এসে কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন ম্যাথু। এ রাজ্যে ব্যবসা করার অছিলায় আলাপ জমান অনেকের সঙ্গে এবং তাঁদের টাকা দিতে শুরু করেন। সেই টাকা দেওয়ার দৃশ্য তুলে রাখেন গোপন ক্যামেরায়। তাঁর সেই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ। এই নিয়ে জনস্বার্থে মামলা হয় হাইকোর্টে। ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। জানা যায়, সেই ফুটেজ জাল নয়।
ম্যাথুর রেকর্ড করা সেই ভিডিও ফুটেজের সত্যতা সিবিআই যাচাই করেছে কি না, তা-ও এ দিন জানতে চান বিচারপতি বাগচী। বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে সেটা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। এই মামলার মূল সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি বাগচী।
এ দিন শুনানি হলেও কৌঁসুলিদের কর্মবিরতির জন্য অপরূপার আইনজীবী হাজির ছিলেন না। ২০ জুন ফের শুনানি হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy