শমীক লাহিড়ী। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক পদ ছাড়বেন শমীক লাহিড়ী। আগামী ২৫ নভেম্বর জেলা কমিটির সভা রয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানেই নতুন সম্পাদক নির্বাচন প্রক্রিয়া সেরে ফেলবে দল। কিন্তু শমীকের জায়গায় কে দায়িত্ব নেবেন জেলার? সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা রাজনীতির নানাবিধ সমীকরণ রয়েছে। সেই সমীকরণ থেকেই মূলত দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে দলে। এক, বারুইপুর পশ্চিমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষ। এবং দ্বিতীয়, দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন প্রভাত চৌধুরী।
শমীক জেলা সম্পাদকের পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক জন তিনটি স্তরে থাকতে পারেন না। তা-ই এই বদল অনিবার্যই ছিল। তা ছাড়া রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন থেকে সদ্যই শমীককে কিছুটা নজিরবিহীন ভাবে সিপিএম আরও একটি বড় দায়িত্ব দিয়েছে। দলের প্রভাতী দৈনিকের সম্পাদক করা হয়েছে তাঁকে। তার পরেই জেলা সম্পাদক বদলের বিষয়টি গতি পায়। কারণ, ডিসেম্বরের গোড়ায় বা নতুন বছরের শুরুতেই দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেবেন ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন সাংসদ।
সিপিএমে যাঁরা জেলা সম্পাদক হন, তাঁরা সকলেই রাজ্য কমিটির সদস্য। মধ্যবর্তী সময়ে নতুন জেলা সম্পাদক করার ক্ষেত্রে আলিমুদ্দিনের একটি অলিখিত রেওয়াজ হল, সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া, যাতে নতুন করে কাউকে রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে না হয়। সেই অঙ্কে রাহুলের জেলা সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই দাবি সিপিএমের একটি অংশের। কারণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে রাহুল ছাড়া রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন তুষার ঘোষ। কিন্তু তিনি দলের ক্ষেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি। তাই তাঁকে আর নতুন করে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। তা ছাড়া তুষারের বয়সও হয়েছে।
তবে দলের অন্য একটি অংশ চায়, মাত্রই কয়েক বছর আগে যুবফ্রন্টে থাকা প্রভাতকে দায়িত্ব দিতে। কিন্তু মহেশতলার এই নেতা নিজে ওই পদ নিতে কতটা রাজি হবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। মূলত রাহুল এবং প্রভাতের দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা হলেও সিপিএমের বেশ কয়েক জন নেতা ঘরোয়া আলোচনায় ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেক সময় জেলার সমীকরণে দু’জনের নাম নিয়ে ‘দলাদলি’ হলে তৃতীয় কাউকে সম্পাদক করে দেওয়া আলিমুদ্দিনের বহু ব্যবহৃত কৌশল। সরকার থেকে চলে যাওয়ার পর গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ণ হুগলি জেলা সিপিএমে এই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল সিপিএম। অনিল বসু এবং সুনীল সরকারের বিবাদের মাঝে প্রাক্তন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীকে জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই তিন নেতাই অধুনাপ্রয়াত। ২০১২ সালে আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ অনিলকে বহিষ্কারও করেছিল দল। ২০১১ সালেই উত্তর ২৪ পরগনার কোন্দলের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবকে জেলা সম্পাদক করে দেওয়া হয়েছিল। গৌতমকে তিন স্তরে থাকার বিষয়ে ‘বিশেষ অনুমতি’ দিয়েছিল সিপিএম পলিটব্যুরো। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কী হতে পারে? সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, সে ক্ষেত্রে রতন বাগচী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের নাম চলে আসতে পারে। তবে তার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলেই মনে করছেন নেতারা।
প্রসঙ্গত, যিনিই সম্পাদক হন, তাঁর নেতৃত্বেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দলকে লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপাতে হবে। জেলায় চারটি লোকসভা কেন্দ্র। যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর এবং জয়নগর। প্রার্থী ঠিক করা, সমঝোতা করা এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী সংগঠন গড়ে তোলার ভার থাকবে নতুন সম্পাদকের কাঁধেই। এখন দেখার শমীকের বদলে কে ওই দায়িত্ব পান এবং কতটা সামলাতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy