কাজের সূত্রে হুগলির মেয়ে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় গিয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, মধ্যরাতে দু’টি গাড়ির রেষারেষিতে দুঃখজনক ভাবে প্রাণ গিয়েছে ২৭ বছরের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার তথা নৃত্যশিল্পীর। গাড়িতে থাকা সুতন্দ্রার সঙ্গীরা ‘ইভটিজ়িং’ এবং উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেছিলেন। সেটাও নস্যাৎ করে পুলিশ জানিয়েছে, এমন কথার উল্লেখ অভিযোগপত্রে নেই। কিন্তু দুই গাড়ির রেষারেষিতেই যদি তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলেও কেন অন্য গাড়ির সওয়ারিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিল না পুলিশ? মেয়ের মৃত্যুর পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও কেন কাউকে গ্রেফতার করা গেল না? মঙ্গলবার বিকেলে এমনই কিছু অভিযোগ করলেন সন্তানহারা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দিনভর চন্দননগরে পুলিশ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভিড় করেছেন সুতন্দ্রার বাড়িতে। তার মধ্যেই তনুশ্রীর অভিযোগ, তাঁর মেয়ে যে গাড়িতে ছিলেন, সেই গাড়িটিকে মত্ত অবস্থায় ধাওয়া করছিলেন অন্য গাড়ির সওয়ারিরা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে জাতীয় সড়কের উপরে মদ খেয়ে মদের বোতল, গ্লাস নিয়ে গাড়ি নিয়ে কেউ বেরিয়ে পড়ে? সিসিটিভির তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের লোকজন দুই গাড়ির রেষারেষি হচ্ছে দেখেও কেন তখন ব্যবস্থা নিলেন না?
রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পুরনো জিটি রোডের সংযোগস্থলে গাড়ি উল্টে মারা যান সুতন্দ্রা। গাড়িতে থাকা সুতন্দ্রার সঙ্গীদের অভিযোগ ছিল, একটি গাড়ি তাঁদের পিছু ধাওয়া করছিল। সুতন্দ্রা ছিলেন ওই গাড়ির আরোহীদের ‘টার্গেট’। অভিযোগ, যুবতীকে অশালীন ইঙ্গিত এবং উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছিলেন কয়েক জন যুবক। মঙ্গলবার কাঁকসা থানায় এ নিয়ে নতুন এফআইআর দায়ের করেছেন গাড়িতে থাকা সুতন্দ্রার এক সঙ্গী। যদিও ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মা বলেন, ‘‘দুটো গাড়ির রেষারেষি হচ্ছে দেখেও কেন গাড়ি দুটো আটক করলেন না পুলিশের কেউ। কেন ধাক্কা মেরে তারা (অভিযুক্তেরা গাড়ি নিয়ে) পালাল?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি সরিয়ে রাখলাম ‘ইভটিজ়িং’-র অভিযোগ। সিসিটিভি-র মনিটরিং তো নিশ্চয়ই চলে। তখন কেন পুলিশ তৎপর হল না। মদের বোতল, মদের গ্লাস ছিল ওই গাড়িতে। মদ খেতে খেতে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে যাচ্ছিল ওরা। সেটা নিয়ে কেন কিছু বলছে না পুলিশ?’’
আরও পড়ুন:
সাদা রঙের একটি এসইউভি সুতন্দ্রাদের গাড়ি ধাওয়া করছিল বলে
অভিযোগ। সুতন্দ্রা যে গাড়িতে ছিলেন সেই গাড়ির চালকও পানাগড়ে একই দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার গাড়িচালক রাজদেও সাঁই, সুতন্দ্রার সঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে
কাজ করেন এমন কয়েক জন তাঁদের বাড়িতে যান। সুতন্দ্রাদের বাড়িতে যান চন্দননগর
পুলিশের ডিসিপি অলকানন্দা ভাওয়াল, এসিপি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগর থানার আইসি শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়। পরিবারের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ
কথা বলেন তাঁরা। জানান, যদি কোনও প্রয়োজন হয় পুলিশ সহযোগিতা করবে। মেয়েহারা তনুশ্রীর মন্তব্য, ‘‘পুলিশের উপরে আস্থা রেখেছি। কত
দিন আস্থা রাখতে পারি, দেখি। দেখা যাক, পুলিশ কী করে।’’
সুতন্দ্রার পরিবারকে সিপিএম আইনি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন ওই দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করবে। কিন্তু তার আগেই কী ভাবে জানিয়ে দেয় কী হয়েছিল! একাধিক ঘটনায় এই রকমের কাজ করছে পুলিশ। আগে থেকে বলে দিয়ে মামলা সাজানো হয়। তরুণীর পরিবার যেটা জানিয়েছে, সেটা ধরে তাঁর মায়ের বয়ান অনুযায়ী অভিযোগ নিতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁরা গাড়িতে ছিলেন, তাঁদের ভয় দেখিয়ে, ‘ব্ল্যাকমেল’ করে বয়ান নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তেরা যে হেতু প্রভাবশালী, তাই মায়ের বয়ান নেওয়া হয়নি। এতে ফাঁসবে পুলিশ।’’