আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদি।
উন্মত্ত জনতার ‘আক্রোশ’ আচমকাই কেড়ে নিয়েছিল তাঁর ১৬ বছরের তরতাজা সন্তানের প্রাণ। তার পরেও কাউকে দোষারোপ না-করে শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চলতি বছর ‘বঙ্গ সম্মান’-এর জন্য তাঁর নাম বিবেচনা করেছিল রাজ্য সরকার। ২১ মে ‘বঙ্গ সম্মান’ অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি যে এই মুহূর্তে ওই সম্মান নিতে অপারগ, সবিনয়ে তা রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছেন রশিদি।
একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছিল আসানসোল এবং সংলগ্ন এলাকা। গোলমালের মধ্যে আসানসোলের রেল পাড় এলাকা থেকে এক দিন হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় ইমামের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র সিবতুল্লা। থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে তার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবু কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করতে চাননি ইমাম। তাঁর যুক্তি, যে-হেতু তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাই তাঁর পক্ষে সরাসরি কাউকে অভিযুক্ত করা সম্ভব নয়। এমনকি ওই ঘটনার পরে ইমাম বার্তা দিয়েছিলেন, সন্তানের মৃত্যুর প্রত্যাঘাত হলে তিনি মসজিদ এবং আসানসোল ছেড়ে চলে যাবেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে সেই বার্তা ইমামকে ওই এলাকায় শান্তির ‘মুখ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
রশিদি শুক্রবার বলেন, ‘‘আমাকে কিছু দিন আগে সরকার থেকে কেউ এক জন ফোন করেন। বলা হয়, ২১ মে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান আছে। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় আমাকে। আমি বলি, এখন রমজান মাস চলছে। মসজিদ ছেড়ে কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। রমজান মাসের পরে হলে এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করব।’’ তবে সরকারি পুরস্কার প্রসঙ্গে ইমামের দাবি, তাঁকে এ বিষয়ে কোনও কথাই বলা হয়নি।
প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, রীতি অনুযায়ী প্রথমে পুরস্কার প্রাপককে সরকারের তরফে ফোন করা হয়। জানানো হয়, সরকার তাঁকে নির্দিষ্ট কোনও পুরস্কার দিতে চাইছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রাজি হলে তবেই সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি দেওয়া হয় প্রাপককে। এ ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইমামের অবদানেরই স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার।
ক্ষমতায় আসার পরেই সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যই অসামরিক এই সম্মান প্রদানের রীতি চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমাম এই মুহূর্তে নিজের ভূমিকার কোনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চাইছেন না বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের অনুমান। ঘটনাচক্রে রাজ্যের প্রাক্তন এক মুখ্যসচিবকেও ‘বঙ্গ সম্মান’ দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি ঘিরেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
এ বছর সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলেকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারে সম্মানিত করবে রাজ্য সরকার। ‘বঙ্গ সম্মান’ জানানো হবে সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy