ফাইল চিত্র।
মাসে বেতন মেরেকেটে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তাতেই টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়। এই পরিস্থিতিতে উর্দি নিয়ে সরকারের নয়া ফরমান ঘিরে আতান্তরে পড়েছেন রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরকারি নকশা মোতাবেক নতুন উর্দি তৈরি করতে গেলে দু’ থেকে আড়াই হাজার টাকা প্রয়োজন। টানাটানির সংসারে সেই টাকা জোগাবে কে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকেই। এই প্রসঙ্গে ফের হোমগার্ড ও ভিলেজ পুলিশদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা।
রাজ্য পুলিশের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে জেলাগুলির বহু থানাই সিভিক ভলান্টিয়ার নির্ভর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা থেকে ট্র্যাফিক সামলানো—সবই করতে হয়। তাই লোকমুখে এঁরা ‘সিভিক পুলিশ’ হিসেবে পরিচিত। পুলিশের মতো কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট উর্দির প্রয়োজন। তবে পুলিশের মতো খাকি উর্দি নয়, সিভিকদের আকাশি জামা ও নীল প্যান্ট পরতে হবে। জামার সামনে-পিছনে এবং টুপিতে ‘সিভিক ভলান্টিয়ার্স’ লেখা থাকবে। সঙ্গে নীল বেল্ট, কালো জুতো। নামের ব্যাজও থাকবে।
পুলিশ কতটা এই ‘সিভিক’-দের উপরে নির্ভরশীল তা ইসলামপুর থানার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এখানে প্রায় ৬৮১ জন সিভিক পুলিশ রয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় এমন উদাহরণ আরও আছে। তাঁদের অনেকেই বলছেন, শুধু উর্দি তৈরি করতেই হাজার দু’য়েক টাকা লাগবে। জুতোর দাম ধরলে খরচ আরও বাড়বে। এক সিভিক পুলিশের কথায়, ‘‘এমন রঙের পোশাক তো রয়েছে। কিন্তু তা নকশার সঙ্গে মিলছে না। তাই নতুন তৈরি করাতে হবে।’’ উর্দি তৈরির জন্য পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ধার করার তোড়জোড় করছেন ইসলামপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সিভিক পুলিশদের অনেকেই।
এত নিয়মের পরেও হোমগার্ড ও ভিলেজ পুলিশদের সমান হারে বেতন মিলবে না কেন সেই প্রশ্ন তুলছেন সিভিক পুলিশদের অনেকে। ইসলামপুরের এক জন বলছেন, ‘‘আমাদের থানায় হোমগার্ড, ভিলেজ পুলিশেরা যে কাজ করে আমরাও তাই করি। ওরা পায় হাজার দশেক, আমরা তার প্রায় অর্ধেক!’’ বেতন বৈষম্য নিয়ে কয়েক বছর আগে আইএলও-কে (আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন) অভিযোগ জানিয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের সংগঠন। প্রশাসনের খবর, সিভিক পুলিশ সংগঠন ও রাজ্যকে বৈঠক করে সেই সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিল আইএলও। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারদের সংগঠনই আর নেই। ফলে আলোচনার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
নবান্নের একাংশের যুক্তি, ভিলেজ পুলিশ ও হোমগার্ডদের দায়িত্ব বেশি এবং কাজও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল মূলত ট্রাফিক পুলিশকে সাহায্য করার জন্য। তাই বেতন ফারাক স্বাভাবিক। যদিও কর্মী ঘাটতি মেটাতে থানায় কেন সিভিক পুলিশদের কাজ করানোর পক্ষে জোরালো যুক্তি মেলেনি। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সরকার নিজের প্রকল্প নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। তাছাড়া আইএলও’র পাঁচটির মধ্যে চারটি প্রস্তাব তো মেনে নিয়েছে সরকার!’’ তাঁর মতে, পঞ্চম প্রস্তাবটি না মানলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিষয়টি তুলে ধরতে পারে আইএলও। কিন্তু তার আঁচ রাজ্যে পৌঁছবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy