সে-দিন: সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে এ রকম দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিলেন মানুষ। —ফাইল চিত্র
ন’বছর কেটে গিয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সুন্দরবন।
২০০৯-এর ২৫মে বিধ্বংসী আয়লায় মারা যান উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু মানুষ। সরকারি হিসেবে সংখ্যাটা ১৪৯। ঘটনার অভিঘাত ছিল আরও বড়। লক্ষাধিক মানুষের জীবনের মূল সুর-তাল ওলটপালট করে দিয়েছিল আয়লা। বহু মানুষ ভিটেমাটি হারান। কৃষিজমি, মাছের ভেড়িতে নোনা জল ঢোকায় জীবিকা বদলাতে বাধ্য হন বহু মানুষ। কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি জমান দলে দলে। বিশাল এলাকায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আয়লার দাপটে। মাটির বাঁধের অবস্থাও দফারফা হয়। সেই ক্ষত এখনও মেরামত সম্ভব হয়নি। সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকায় যাঁরা ফের সংসার পেতেছেন, তাঁরা এখনও ভয়ে ভয়ে দিন কাটান সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি এলাকায়।
আয়লার পরে গত কয়েক বছরে দুই ২৪ পরগনায় ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ তৈরির কথা ছিল। হয়েছে ৫৬ কিলোমিটার। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৭-’১৮ আর্থিক বর্ষে একটি টাকাও আয়লা বাঁধের জন্য দেয়নি। রাজ্য ৯২ কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি বছরেও কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়াই আমরা প্রায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত আয়লা বাঁধ সারানোর লক্ষ্য নিয়েছি।’’ কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য এলাকার তুলনায় সুন্দরবনের মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকায় মাটিতে জমে থাকা নুন অনেক দিন ভুগিয়েছে চাষিদের। এই অবস্থায় জৈব চাষের পরামর্শ দেওয়া হয় কৃষি দফতর থেকে। কিছু এলাকায় চাষিরা যার সুফল পেয়েছেন। কয়েক বছরে নয়া জলাশয় খুঁড়ে মাছ চাষেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
ম্যানগ্রোভের পরিমাণ এক বছরে কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার দাবি, ম্যানগ্রোভ নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। বনাঞ্চলও বেড়েছে। এ বছর আরও ৭০০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানো হবে বলে জানান তিনি। সন্দেশখালির গ্রামে দুই ছেলেকে জলের তোড়ে ভেসে যেতে দেখে ঝাঁপ দেন বাবা বাদল খামারু। স্রোতের টানে তলিয়ে যায় বাপ-ব্যাটা। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুরনো কথা মনে পড়লে চোখ ভিজে যায়। কী করব, বাঁচতে তো হব।’’
ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে এই মুখই ভরসা সুন্দরবনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy