ধৃত সৌমেন রায়। —নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে টনক কি নড়ল!
মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় সিভিক ভলান্টিয়ারের মারধরের জেরে স্কুটিচালক সৌমেন দেবনাথের ম়ৃত্যুর পরে সিভিক পুলিশকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রবিবার বলেন, ‘‘সিভিক পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব।’’ কিছু ঘটে গেলে কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়, সেই বিষয়ে বিভিন্ন পুলিশকর্তাকে দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে কলকাতার প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদারের। তিনি মনে করেন, প্রশিক্ষণ বলতে শুধু তো শারীরিক প্রশিক্ষণ নয়। ওঁদের আইনের পাঠও নেওয়া উচিত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে যাঁরা গুন্ডাগিরি করছেন, তাঁরা কতটা সেই আইনের পাঠ নিতে সক্ষম হবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তুষারবাবু। তিনি মনে করেন, হাজার হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়।
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মন্তব্য তাঁদের এত দিনের অভিযোগেরই স্বীকৃতি বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা যা বলে আসছিলাম, মন্ত্রী সেটাই বলেছেন! এত দিন জামায় ব্যাজ আটকে আর হাতে ডান্ডা ধরিয়ে লোক ঢুকিয়েছেন। প্রশিক্ষণ এবং ইএসআই, পিএফ-সহ ন্যূনতম মজুরি দিয়ে যথাযথ পদ্ধতিতে নিয়োগ করুন।’’ বিরোধী দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘সাড়ে ছ’বছর ধরে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের নামে ক্যাডাররাজ চলেছে। এখন আক্কেল দাঁত গজাল!’’
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুজয় চক্রবর্তীর মতে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের জানা উচিত, কী ধরনের কাজ তাঁদের করতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং কর্তব্যের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সিভিক পুলিশের ক্ষমতা কতটা, তাঁদের কী করণীয়, কোথায় কখন আচমকা পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে, তা অনুধাবনের ক্ষমতা— এ-সবই প্রশিক্ষণের অঙ্গ হওয়া উচিত।’’
নিয়ম মানা ও ভাঙা নিয়ে আমজনতা ও পুলিশের মধ্যে চাপানউতোরের মধ্যেই বিক্ষোভ হয় বড়জোড়া চৌমাথায়। ধরপাকড়ের সময়ে হেলমেটহীন এক মোটরবাইক চালক পড়ে গিয়ে জখম হন। সিভিক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করে জনতা।
মধ্যমগ্রাম চৌমাথার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমদম স্টেশন, দমদম রোডের নাগেরবাজার এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে আইএলএস হাসপাতালের সামনে, ফ্লাইওভারের শেষে, এয়ারপোর্ট মোড়ে, বারাসতেও গাড়ি পরীক্ষার নামে কিছু সিভিক পুলিশকর্মী সমানে হেনস্থা করছেন। সিভিক পুলিশদের গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করা বা গাড়িচালকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের নিয়ম না-থাকলেও তা করা হচ্ছে। যদিও এ দিন মধ্যমগ্রাম চৌমাথা-সহ সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সিভিক পুলিশকর্মীদের দেখা মেলেনি।
পুলিশের বক্তব্য, সব সমস্যার মূলে আছে নিয়ম না-মানার মানসিকতা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, অন্যায়ের সঙ্গেই আপস করতে গিয়েই যত আপত্তিকর প্রসঙ্গ আসে। ‘‘পুলিশ ধরবে বলে হেলমেট নয়, আসলে নিজের সুরক্ষার জন্যই যে সেটা পরে নেওয়া উচিত, এই বোধটা জরুরি। মদ্যপান করে গাড়ি চালানো শুধু আইনবিরুদ্ধই নয়, তা যে অনেক সময়ে মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে— সেটা বুঝতে হবে। এই সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকলেই আর সমস্যা হয় না,’’ বলছেন অভিজিৎবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy