স্টিয়ারিং হাতে বেপরোয়া গাড়ি ছোটানোর দিন কি তবে শেষ হতে চলেছে?
রাজ্য সরকারের দাবি অন্তত তেমনটাই। পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্ত, কোনও বাণিজ্যিক গাড়িই আর আগামী মাস থেকে ইচ্ছেমতো গতি বাড়াতে পারবে না। গতি বেঁধে দিতে গাড়ির চাকায় বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যেই গতি নিয়ন্ত্রণের এই নতুন ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট তেমনটাই নির্দেশ দিয়েছে।
পরিবহণ-কর্তারা জানান, প্রথম পর্যায়ে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে। পরে একই আইন বলবৎ হবে প্রাইভেট গাড়ি ও দু’চাকার যানের ক্ষেত্রেও।
নবান্নের খবর, গত বছরের এপ্রিল মাসে বাণিজ্যিক গাড়ির গতিবেগ বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক্যালস আইনে একটি সংশোধন এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার ভিত্তিতে ওই মাসেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিল্লি। এর পরেই দেশের সমস্ত রাজ্যগুলিকে এই সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার পরামর্শ দেয় তারা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও এই সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দিয়ে সব রাজ্যকে দ্রুত এই নিয়ম চালু করার নির্দেশ দেয়। পশ্চিমবঙ্গ তার পরেই উদ্যোগী হয়েছে।
এ রাজ্যে বাণিজ্যিক গাড়ির জন্য কত গতি ধার্য হয়েছে?
পরিবহণ দফতরের খবর, বেসরকারি ও সরকারি বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সি, ছোট বাস, লাক্সারি ট্যাক্সি বা ম্যাক্সি ক্যাবের মতো গাড়িগুলির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর ডাম্পার, ট্যাঙ্কার, স্কুলগাড়ি বা নানা রকম বিপজ্জনক মালবহনকারী ট্রাকের ক্ষেত্রে গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পরিবহণ দফতর। চলতি মাসেই এই সংক্রান্ত আইন বলবৎ হবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। এই গতির বাঁধনের বাইরে থাকছে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স, দমকল ও পুলিশের গাড়ি।
পরিবহণ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে এখন সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ি চলে। এদের জন্য সরকারের নির্দেশ, আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসাতে হবে। পাশাপাশি, আগামী মাস থেকে রাজ্যে যে সব বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি হবে, তাতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাত্রাতেই বাঁধা থাকবে গতি। গাড়ি সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে সে ব্যবস্থাই হয়েছে বলে জানান এক পরিবহণ কর্তা।
পরিবহণ দফতরের একাংশের বক্তব্য, ৮০ অথবা ৬০ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ সীমা আগেও বেঁধে দেওয়া ছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, গতি মেনে গাড়ি চলছে কি না, তা বোঝার জন্য এত দিন পুলিশের নজরদারির উপরে নির্ভর করতে হত। এ বার তা হবে না। নতুন গাড়ি হলে গতি বাঁধাই থাকবে। আর পুরনো গাড়িতে যন্ত্র বসাতেই হবে। সেই যন্ত্র বসানোর জন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ও দেওয়া হয়েছে।
অনেকের মতে, স্বাভাবিক নিয়মেই সিংহভাগ গাড়ি চলে কলকাতায়। আর এই শহরে গতি বাড়িয়ে গাড়ি চালানো কার্যত অসম্ভব। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া গতি মেনে চলতে চালকদের সমস্যা হবে না। যুক্তিটি মেনেই পরিবহণ কর্তাদের দাবি, শহরের মধ্যে গতি বাড়ানো না গেলেও রাজ্যের এক্সপ্রেসওয়েগুলিতে গাড়ি ছোটে ১০০ থেকে ১৪০ কিমি বেগে। তাতে আকছার দুর্ঘটনা হয়। গতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা অনেকটাই এড়ানো যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy