নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘মস্ত দুর্নীতির’ আঁচ পেয়ে শ’তিনেক সিভিক পুলিশকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। মাস চারেক আগের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করা মামলায় রাজ্য সরকার দাবি করল, থানায় থানায় সিভিক পুলিশ নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে, অনৈতিক কোনও কিছু হয়নি।
বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ও বারিকুল থানায় সিভিক পুলিশ নিয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে গত এপ্রিলে মামলা করেছিলেন বঞ্চিত কয়েক জন প্রার্থী। নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত প্রতিটি শুনানিতে রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেন। কী রকম?
কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ বিচারপতির মন্তব্য ছিল, ‘‘এক দিনে ১,৩৫১ জনের ইন্টারভিউ! কারা নিয়েছেন? তাঁদের ক’টা মাথা?’’ তিনি জানতে চান, ‘‘টানা বাইশ ঘণ্টা ধরে ১,৩৫১ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে! ইন্টারভিউ কি রাত তিনটেয় শুরু হয়েছিল?’’ এ প্রসঙ্গে সরকারি কৌঁসুলির পেশ করা যুক্তিও তাঁর মনঃপূত হয়নি। ‘‘প্রশাসনে এমন নৈরাজ্যই চলবে?’’— প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা গ্রেট স্ক্যাম (বিরাট কেলেঙ্কারি)।’’ রাজ্য জুড়ে সিভিক পুলিশ নিয়োগের পদ্ধতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে তিনি অভিহিত করেন।
সওয়াল-জবাব শেষে গত ২০ মে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে সেই পর্যবেক্ষণেরই প্রতিফলন পড়ে। বারিকুল ও সারেঙ্গা থানায় নিয়োগপ্রাপ্ত শ’তিনেক সিভিক পুলিশকে অবিলম্বে সরানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। থানার সুবিধার্থে সিভিক পুলিশ নিতে হলে হলে কী ভাবে নিতে হবে, তা-ও জানিয়ে দেন। কী ভাবে?
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বলা হয়েছিল, এ বার থেকে সঠিক পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ‘সাবজেক্টিভ’ (৮০ নম্বরের) ও ‘অবজেক্টিভ’ (২০ নম্বর) প্রশ্নের পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিক পুলিশ নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগ-পদ্ধতি সুপারিশ করার জন্য তিনি তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে দেন। তাতে থাকার কথা রাজ্যের অর্থ-সচিব, পরিবহণ-সচিব ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের। আদালত জানিয়ে দেয়, কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে মুখ্যসচিবের কাছে সুপারিশ-রিপোর্ট পাঠাতে হবে।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অবশ্য কার্যকর হয়নি। উল্টে তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার যার শুনানিতে রাজ্যের কৌঁসুলি তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, এগজিকিউটিভ অর্ডার মেনেই রাজ্য জুড়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ নেওয়া হয়েছে। সওয়ালে সিভিক পুলিশদের কৌঁসুলি তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি— বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ বৈধ নয়, কারণ নিয়োগপ্রাপ্ত সিভিক পুলিশদের বক্তব্য না-শুনেই তা দেওয়া হয়েছে। তাই ন্যায়বিচার হয়নি।
অন্য দিকে চাকরি না-পেয়ে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তি দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী কোনও নিয়োগে অস্বচ্ছতা ও পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকলে তা বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ যথার্থ বলে তাঁরা দাবি করেন।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy